শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় - শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি শিশু ওজন বৃদ্ধির উপায় ও শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির উপায় জানতে চান? আপনার শিশুর ওজন ও উচ্চতা নিয়ে বেশ চিন্তিত? তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টের শিশু ওজন বৃদ্ধির উপায় ও শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। এছাড়াও শিশুর ওজন ও উচ্চতা নিয়ে কিছু অজানা তথ্য আলোচনা করা হয়েছে।
সবশেষে লেখকের গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য পেশ করা হয়েছে। তাই মনোযোগ সহকারে পুরো পোষ্টটি পড়তে থাকুন। অবশ্যই আপনি শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় ও শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে সকল সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। আশা করছি আপনি পুরো পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন।

পোষ্ট সূচিপত্রঃ শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় - শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির উপায়

ভূমিকা

বাড়ন্ত বয়সে শিশু সার্বিক উন্নতির জন্য খাদ্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ সময় একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নতির বিকাশ ঘটে। বিশেষ করে শিশু উচ্চতা গঠনের জন্য পুষ্টি সম্মত খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর হ্যাঁ আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন,

আপনার নবজাতক শিশুকে জন্মের পর শাল দুধ খাওয়া খাওয়ানো হয়েছে কিনা? কারণ শাল দুধ শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ তালিকার একটি অধ্যায়। আর শুধু খাদ্য নয় ঘুমও শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক। চলুন নিম্নে জেনে নেই শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় ও শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির উপায়ঃ

শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায়

শিশুর ওজন বৃদ্ধির নানা উপকরণ রয়েছে। এর মধ্যে দুধ ডিম মিষ্টি আলু কলা মুরগির মাংস অ্যাভোকাডো, মাখন ইত্যাদি পুষ্টি সম্পন্ন খাবার রয়েছে । নিচে তা ব্যাখ্যা করে বোঝানো হলোঃ
  • দুধঃ শিশুদের ওজন বৃদ্ধিতে দুধ একটি আদর্শ খাবার। শিশুকে এক বছর বয়স থেকে গরুর দুধ খাওয়াতে পারেন। সারাদিনে অন্ততপক্ষে দুই গ্লাস দুধ খাওয়ানো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • ডিমঃ প্রোটিনের উৎস হিসেবে ডিম খুব কার্যকরী। ওজন বৃদ্ধিতে প্রোটিন হিসেবে ডিমের ভূমিকা অনেক। তাই শিশুর জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখুন। প্রোটিন ভিটামিন মিনারেল সবকিছু চাহিদা পূরণ করে থাকে ডিম। তাই ডিম হচ্ছে শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলুর তো কোন বিকল্পই নেই। ছয় মাস বয়স থেকেই মিষ্টি আলু দিতে পারেন আপনার শিশুকে। এছাড়াও মাখন স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের অন্যতম উৎস। আরো রয়েছে কলা মুরগির মাংস মাখন যা প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ভূমিকা পালন করে।
  • কলাঃ কলাতে রয়েছে ভিটামিন, ফাইবার ও পটাশিয়াম। আপনার শিশুকে এসব কিছু পুষ্টি সম্পন্ন করে তুলতে ছয় মাস বয়সের পর থেকে কলা দিতে পারেন।
  • মুরগির মাংসঃ পেশী মজবুত করতে মুরগির মাংস বেশ কার্যকরী। এটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। তাই সপ্তাহে অন্ততপক্ষে দুই দিন হলেও মুরগির মাংস খাদ্য তালিকায় রাখুন।
  • অ্যাভোকাডোঃ অ্যাভোকাডো একটি ফল। আর এই ফলে ক্যালরি ও ফ্যাট দুটোই পাওয়া যায়। যদিও বা এই ফলটি সাদ বিহীন বাচ্চারা খেতে চাই না তবে একটু টেস্টি করে তৈরি করলে বাচ্চারা আগ্রহ পাবে খেতে। শিশুর ওজনবৃদ্ধি করার জন্য দ্রুত ফল পেতে চান তাহলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অ্যাভোকাডো রাখুন।
  • মাখনঃ যদিও বা আমরা বড়রা মাখন খেতে একটু সাবধান থাকি তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম না মানলেও চলবে। আপনি শিশুকে মাখন রুটি বা অন্যান্য খাবারের মধ্যে মাখন মিশ্রণ করে দিতে পারেন। কারণ স্বাস্থ্যকর ভ্যাটের অন্যতম উৎস হচ্ছে মাখন।

শিশুর ওজন বৃদ্ধির ঔষধ

আমাদের প্রথমে জানতে হবে বাচ্চার ওজন কম আছে কিনা। শিশুর ওজন কম হওয়ার কিছু লক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো মায়ের ভূমিকা ও অসাবধানতা।তবে অনেক সময় রোগের ক্ষেত্রেও শিশুর ওজন কমতে পারে। এছাড়াও রুচি স্বল্পতা বা কৃমি রোগের কারণে বাচ্চাদের ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে।
যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে বাচ্চাকে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওজন বৃদ্ধির ঔষধ পাওয়া যায় সেগুলো খাওয়ানো যেতে পারে। যেমন জিংক, জিংক বি, পোগো, টেফলোর,বিকজিং, লাইভ সেভিং, ভেরি সুইট, অ্যাপল ডন, ভিটাগ্রো, ইত্যাদি। এ সকল ঔষধ বাজারে এভেলেবল পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।

শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির উপায়

শিশুর ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্য অতুলনীয়। এছাড়াও গভীর ঘুম, শরীরচর্চা, সাঁতার, স্কিপিং, হ্যাঙ্গিং, ইত্যাদি প্রয়োজন। শিশুর শরীর সুস্থ ও শক্তিশালী রাখার জন্য প্রতি রাতে অন্ততপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। সাঁতার এক ধরনের শরীরচর্চা যা সামগ্রিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

সাঁতার কাটলে মেরুদন্ড শক্তিশালী হয় এবং উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। শরীর চর্চার মধ্যে স্কিপিং ও হ্যাঙ্গিংও গুরুত্বপূর্ণ। স্কিপিং বা দড়ির লাফ মজাদার শরীরচর্চা যা হৃদপিণ্ড সহ পুরো দেহ কাজ করে এবং উচ্চতা বাড়তে খুব সাহায্য করে। এদিকে হ্যাঙ্গিং মেরুদণ্ডকে দীর্ঘায়িত করতে সক্ষম হয়।
যদি আপনার বাচ্চা হ্যাঙ্গিং করতে উৎসাহ না পায় তবে লুপআপ এবং চিনআপস করতে বলতে পারেন। এদিকে সুষম খাদ্যের সঠিক অনুপাতে প্রোটিন, শর্করা, চর্বি এবং ভিটামিনের মিশ্রণ হওয়া উচিত। যা শিশুদের শরীরের সঠিক পুষ্টি পৌঁছায় এবং ওজন ও উচ্চতা বাড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায়।

বাচ্চাদের উচ্চতা বৃদ্ধির খাবার

বাচ্চাদের উচ্চতা বৃদ্ধির খাবারের তালিকার মধ্যে রয়েছে ডিম, দুধ, মুরগির মাংস, পালং শাক, গাজর, মটরশুঁটি, ছোলা, সয়াবিন ও ফল ইত্যাদি। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে একটি করে ডিম খাদ্য তালিকায় রাখুন। তা ওমলেট বা সিদ্ধ দুটোই হতে পারে। শুধুমাএ এক গ্লাস দুধ যাতে রয়েছে প্রোটিন,ক্যালসিয়াম,মিনারেল ও অন্যান্য ভিটামিন। এছাড়াও শরীর এবং মস্তিষ্কের জন্য বেশ উপকারী দুধে থাকা ফ্যাট।মুরগির মাংস প্রোটিন সমৃদ্ধ তাই এই খাবারটি বাচ্চাদের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

আমরা জানি আয়রন ও ক্যালসিয়াম বাচ্চাকে লম্বা করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি হাড়ও মজবুত করে। তাই এতে সুপার সবজি পালং শাক এর বিকল্প নেই। গাজর ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ। তাই কাঁচা গাজর সালাদ অথবা রস করে বাচ্চাকে খাওয়ান। প্রোটিন, ফাইবার, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি এবং আইরন রয়েছে মটরশুঁটি ও ছোলাতে। 
তাই এটিও লম্বা হতে বিশেষ উপযোগী খাবার। বাচ্চার হাড় এবং দেশি মজবুত করতে সয়াবিন প্রয়োজন। এটি উচ্চতা বৃদ্ধিতে সক্ষম। তাই সয়াবিন সবজির মতো করে রান্না করে বাচ্চাকে খাওয়ান। এদিকে ভিটামিন এ ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ ফল যেমন আম, পেঁপে, টমেটো, কলা, আপেল, মিষ্টি আলু ইত্যাদি। এই ফল গুলো উচ্চতা বৃদ্ধিতে অনেক উপকার।

উচ্চতা বৃদ্ধির ঔষধ

শিশুদের উচ্চতা নির্ভর করে বাবা-মায়ের উপর। বাবা মায়ের উচ্চতা যদি কম হয়ে থাকে তবে সন্তানের উচ্চতা কম হতে পারে এটাই স্বাভাবিক। তাই জেনেটিক ভাবে বাবা মায়ের উচ্চতা ও একটা নিয়ামক। এছাড়া হরমোন জনিত সমস্যা বা অপুষ্টি থেকে উচ্চতা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে একটি পরামর্শ দিতে পারি সাধারণত উচ্চতা বাড়ানো তেমন কোন নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। কেবল মাত্র উপরের ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব।

লেখকের মন্তব্য

সবশেষে বলতে চাই যে, স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবাই জ্ঞাত। উপরের শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় ও শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। তবে আপনার বাচ্চার যদি ওজন বৃদ্ধি ও উচ্চতা নিয়ে জটিল কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে একটু সচেতন হবেন। আপনার নিকটবর্তী কোন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়াবেন বাচ্চাকে। শিশুদের বিষয়টি খুব সেনসিটিভ হয়ে থাকে। তাই কোন প্রকার অবহেলা করা চলবে না। আপনার শিশুকে যত্ন নিন, পুষ্টি সম্পূর্ণ খাবার পরিবেশন করুন সুস্থ থাকুন। কারণ আজকের আপনার আমার শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন