শিশুদের ঘুম কম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি শিশুদের ঘুম কম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার জানতে চান? আপনার
বাচ্চার ঘুম কি খুবই কম? একদমই ঘুমাতে চাই না এরকমটা কিছু? আপনি কি আপনার বাচ্চার
ঘুম নিয়ে খুব চিন্তিত? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোস্টে আলোচনা করা
হয়েছে, শিশুদের ঘুম কম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে। আশা করি আমার এই পোস্টটি
পড়ে আপনি উপকৃত হবেন।
ভূমিকা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দুশ্চিন্তা তালিকায় ঘুম একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে।
বিশেষ করে শিশুর মায়েদের বেশি ভুগতে হয় বাচ্চাদের ঘুম নিয়ে। তাই বিস্তারিত
জানতে হলে আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ঘুম কম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার জানুন
- ভূমিকা
- শিশুদের দ্রুত ঘুম পাড়ানোর উপায়
- শিশুদের ঘুম কম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
- শিশুদের ঘুমের ঔষধ
- অটিজম বাচ্চাদের ঘুম
- সর্বশেষ পরামর্শমূলক কিছু কথা
ভূমিকা
বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের ঘুম খুবই কম । তবে ঘুম না হওয়ার বিভিন্ন কারণ
রয়েছে। যেমন ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা হতে পারে । পেটে গ্যাস, নাক বন্ধ
,এনার্জি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, খিচুনি, দুঃস্বপ্ন, ঘুমের মধ্যে হাঁটা বা
কথা বলা, এ ডি এইচ ডি বা অটিজমের মতো মারাত্মক রোগ ইত্যাদির কারণে ঘুমের সমস্যা
দেখা দিতে পারে।
আপনার আমার মত অভিভাবকদের শিশু সুস্থতা নিয়ে নানা দুশ্চিন্তা রয়েছে। আর
ঘুম কম হলে শিশু শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। চলুন জেনে
নেই শিশুর সুস্থতার জন্য ঘুম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধ্যায়।
শিশুদের দ্রুত ঘুম পাড়ানোর উপায়
- ঘুমানোর জন্য সঠিক সময় বেছে নিন
- শিশুদের বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘরের আলো নিভিয়ে দিন।
- ঘুমানোর আগে শিশুকে হালকা মালিশ দিন।
- শিশুর উষ্ণ পানিতে গোসল।
ঘুমানোর জন্য সঠিক সময় বেছে নিন
স্বাভাবিক ভাবে সারাদিনে অন্ততপক্ষে শিশুদের তিনবার ঘুমানো উচিৎ। তবে এই তিনবার
ঘুমানোর সঠিক সময় হচ্ছে সকাল দুপুর ও বিকেল। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় ছয় মাস
পেরিয়ে সাত-আট মাস হয়ে গেলে শিশুদের মধ্যে বিকালের ঘুমের প্রবণতা অনেকটাই কমে
যায়। একবার যদি শিশুর ঘুমের সময় ঠিক করে ফেলা যায় তবে সেটা অভিভাবকের জন্য
ভালো ও শিশুর জন্য ভালো।
দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা ঘুমানোর একটি সঠিক সময় বেছে নিন। কিছু কিছু শিশুদের ঘুম
পারানো কিছু কায়দা থাকে তবে সেটা একেবারেই ভিন্ন। প্রথম কয়েক দিন একটু ধৈর্য
সহকারে আরাম স্বস্তি দিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন।
শিশুদের বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন
অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই রাতে জেগে ওঠার অভ্যাস থাকে। এমন অভ্যাস করুন যাতে ঘুম
ভাঙলে আবার নিজেই ঘুমিয়ে যায়। এক্ষেত্রে এমনটা করতে পারেন আপনার শিশুর ঘুম
ভেঙ্গে গেলে কোলে না নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে দিন। এতে করে শিশুদের নিজে
থেকেই বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে উঠবে।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘরের আলো নিভিয়ে দিন
আপনার শিশুকে রাত্রে কৃত্রিম আলো বন্ধ করে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। এই কৃত্রিম
আলোর কারণে ব্যাহত হতে পারে হরমোন তৈরি। এছাড়াও কৃত্রিম আলো বন্ধের উপকারিতা
হচ্ছে শিশুদের মেলাটোনিন তৈরি হতে সাহায্য করে।
ঘুমানোর আগে শিশুকে হালকা মালিশ দিন
বাচ্চাদের ঘুমের জন্য অত্যন্ত ভালো পন্থা হলো বেবি লোশন বা তেল মালিশ। এই মালিশ
শিশুর শরীরকে শান্ত রাখে এছাড়াও শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য অপরিহার্য।
শিশুর উষ্ণ পানিতে গোসল
শিশুর ঘুমের জন্য উষ্ণ পানিতে গোসল অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উষ্ণ পানিতে গোসল
শিশুর শরীরে তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে শিশুর অতি তাড়াতাড়ি ঘুম এসে যায়। তবে
প্রতিটি বিষয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করা ভালো।
শিশুদের ঘুম কম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
অনেক সময় দেখা যায় যে শিশু স্বপ্নে এমন কিছু দেখে যা থেকে তাকে উদ্বিগ্ন করে
দেয় আরো ভীত এবং অস্থির করে তোলে। এটি হয় সম্ভবত ঘুমের রেপিড আই মুভমেন্টে।
এটি পাঁচ থেকে ছয় বছরে শিশুদের মাঝে বেশি দেখা যায়। এর ফলে পরবর্তীতে মানসিক
চাপ জনিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই কম ঘুমানোর অভ্যাসটি পরিহার করতে
হবে।
বয়স অনুযায়ী শিশুর ঘুমের তালিকাঃ
- ১ থেকে ৩ মাসের শিশু অন্ততপক্ষে ৭ ঘন্টা ঘুমাবে দিনে রাতে ৩ বার সর্বমোট ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা।
- ৩ থেকে ৬ মাসের শিশু অন্ততপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা ঘুমাবে দিনে রাতে ৩ বার সর্বমোট ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা।
- ৬ থেকে ৯ মাসের শিশু অন্ততপক্ষে ৩ ঘন্টা ঘুমাবে দিনে রাতে ৩ বার সর্বমোট ১৪ ঘন্টা।
- ৯ থেকে ১২ মাসের শিশু অন্ততপক্ষে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট ঘুমাবে দিনে রাতে ২ বার সর্বমোট ১৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট।
- ১২ মাসের শিশু অন্ততপক্ষে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ঘুমাবে দিনে রাতে ২ বার সর্বমোট ১৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
শিশুদের ঘুমের ঔষধ
অভিভাবকরা মনে রাখবেন ঘুমের ওষুধ গুলি অতি শক্তিশালী ওষুধ যা প্রত্যেক শিশুর
স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। শিশু স্নায়ুতন্ত্র খুব বেশি
শক্তিশালী হয় না। অনেক বাবা মায়েরায় চায় শিশুটিকে দ্রুত শান্ত করে দেওয়া
তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া। এক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধ পরিহার করে অন্যান্য উপায়
গুলি সন্ধান করুন। যেমন হতে পারে শান্ত পরিবেশে একটি গল্প গান বা কবিতা বলে
বাচ্চাদের কে ঘুম পাড়াতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার টিপস
তবে আপনার বাচ্চা যদি একদমই না ঘুমায় তাহলে স্বল্প মেয়াদী উপায় হিসেবে
মেলাটোনিন বেছে নিতে পারেন। এটি কিছু বয়স্ক শিশু বা কিশোর কিশোরীদের জন্য।
আবার মেলাটোনিন এর পরিবর্তে ম্যাগনেসিয়াম বেছে নিতে পারেন। শরীরের জন্য
অপরিহার্য একটি খনিজ হচ্ছে ম্যাগনেসিয়াম। ম্যাগনেসিয়ামে দারুন এক প্রশান্তি
অনুভব করে।
অটিজম বাচ্চাদের ঘুম
অটিজম বা অটিস্টিক শিশুদের অধিকাংশই ঘুমের সমস্যা থেকে থাকে। এসব বাচ্চারা
সহজে ঘুমাতে চায় না আবার যখন ঘুমিয়ে যায় তখন এতটাই ঘুম যে সকালে টেনে
ওঠানো সম্ভব হয় না। এদের ঘুম সম্ভবত পাতলা হয়ে থাকে অল্পেই জেগে যায়। এক
কথায় এদেরকে ঘুম পাড়ানো ছোটখাট একটা যুদ্ধের মত।
প্রতিটি অটিজম বা অটিস্টিক শিশুরা আলাদা ধরনের হয়ে থাকে। অটিস্টিক শিশুদের
ঘুম পাড়াতে হলে অন্ততপক্ষে এক থেকে দুই ঘন্টা আগে টেলিভিশন বা ল্যাপটপ,
কম্পিউটার অথবা মোবাইল বন্ধ করে দিতে হবে।ঘুমের আগে তার সাথে হই-হুল্লোড় কোন
খেলাধুলা একদমই করা যাবে না।
যদি না ঘুমায় তবে পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।অনেক
বাচ্চারা গল্প পছন্দ করে সে ক্ষেত্রে ঘুম পারানোর সময় ছন্দ মেলানো কবিতা
গল্প বা গান গেয়ে ঘুম পাড়াতে হবে। অটিস্টিক শিশুরা অন্য বাচ্চাদের তুলনায়
একটু বেশি এনার্জি ব্যয় করে তাই তাদের পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরী।
সর্বশেষ পরামর্শমূলক কিছু কথা
বাচ্চার ঘুম নিয়ে অভিভাবকের চিন্তা শেষ নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর বয়স
বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের ঘুমের সময় এলো তারতম্য ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে
অভিভাবকদের কিছু করণীয় থাকে। শিশু ঘুমানোর জন্য সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে
দেওয়া বাবা মায়ের কর্তব্য।
শিশু বিশেষজ্ঞ, ড. মিজানুর রহমান বলেন, বয়স অনুযায়ী শিশুদের ঘুমের ধরন ভিন্ন
ভিন্ন হয়ে থাকে এটাই স্বাভাবিক। তিনি আরো বলেন শিশু সুস্থ থাকার প্রধান ও
অন্যতম শর্ত হচ্ছে ঘুম। এছাড়া শারীরিক নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে জোর
করে কোন অভ্যাস তৈরি করা যায় না শান্ত মেজাজে ধৈর্য ধরে শিশুর প্রতি নজর রাখতে
হবে।