জিন জাতি কাকে বলে? জিন জাতি কোথায় থাকে?
প্রিয় পাঠক,আপনি কি জিন জাতি কাকে বলে? জিন জাতি কোথায় থাকে? জিন জাতি থেকে বাঁচার
উপায় এবং সমাধান নিয়ে চিন্তিত? আজকে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে জিন জাতির
বিস্তারিত জানাবো। আপনি বিস্তারিত জানতে চাইলে আমার এই পোস্ট টি মনোযোগ
সহকারে পড়তে থাকুন।আশা করি আপনাদের অবশ্যই ভালো লাগবে।
সত্যিকার অর্থে জিন জাতি নিয়ে হাজারো কৌতুহল আমাদের মাঝে। কেউ কেউ অতি
আবেগ নিয়ে বিভিন্ন অবাস্তব ঘটনা জিন জাতিকে নিয়ে ঘটায়। যার
প্রতিফলন আমাদের সমাজে ঘটে থাকে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ জিন জাতি কাকে বলে? - জিন জাতি কোথায় থাকে?
ভূমিকা
বিজ্ঞান এখনো জিনের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ দিতে পারেনি। তবে একথা সত্য যে আজও আমাদের সমাজে কিছু কিছু মানুষ জিন বশীভূত করা বা জ্বীনের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি তে খুব বিশ্বস্ত। ইতিহাসের পাতায় খুঁজে পাওয়া গেছে ইসলাম ধর্ম আবির্ভাব এর কয়েকশো বছর পূর্বে প্রাচীন আরবে জিন রূপে কোন চরিত্রের আরাধনা বেশি প্রচলিত ছিল।
ইসলাম সংক্রান্ত বিশ্বাস থেকে আমরা জানি যে আল্লাহর সৃষ্ট মানুষের ন্যায় অপর আরেকটি জাতি জিন জাতি। তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। মানব আগমনের পূর্ব থেকেই ছিল এই পৃথিবীতে জিন জাতি। এছাড়াও কুরআনে এসেছে, আমাদের মাঝে আছে মুসলমান এবং আছে কঠোর আত্মার কাফির।
জিন জাতি কাকে বলে?
ইসলাম ধর্মের মূল গ্রন্থ কুরআনে বর্ণিত জিন জাতি হচ্ছে একটি জীব বা সৃষ্টি।
জিন একটি আরবি শব্দ। এই শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে অদৃশ্য, কোন কিছু যা গুপ,
অন্তরালে বসবাসকারী বা অনেক দূরবর্তী। প্রাক ইসলামী যুগে অন্যান্য আরোপ এবং
এর কাছাকাছি এলাকায় জিন জাতি সংক্রান্ত বিশ্বাস বিদ্যমান ছিল। জিন বলতে কিছু
নেই এ ধারণা একেবারেই ভুল।
মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেন পবিত্র কোরআনে, আমি সৃষ্টি করেছি জ্বীন প্রজ্বলিত
অগ্নিশিখা থেকে। কুরআনে একটি স্বতন্ত্র সূরার নামকরণ হয়েছে তা হচ্ছে সূরা
জ্বীন। বহু বিস্ময়কর তথ্য রয়েছে এ সুরাতে প্রায় ৫৭ টি আয়াতে যাতে জিনের
অস্তিত্ব নিশ্চিত রুপে প্রমাণ করে। তবে প্রাচীন আরবদের মতে জিনরা আগুনের
তৈরি।
জিন জাতির গঠনসমূহ।
হাদিস এবং কুরআনে বর্ণিত রয়েছে ধোয়াবিহীন আগুনের তৈরি জিন জাতি। কুরআনের
আরো বলা হয়েছে, আগুনের শিখা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে জ্বীনকে। জিনের গঠন
সম্পর্কে হাদিসে আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেছেন - আদমকে সৃষ্টি করা
হয়েছে মাটি থেকে, ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে আলো থেকে এবং জ্বীনদের
সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে। তবে গঠন অনুযায়ী তিন ধরনের হয়ে থাকে এ জিন
জাতি। সালাবা আল খাসানী থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেছেন -
জিন রয়েছে তিন ধরনের,
- একপ্রকার জিনরা সাধারণত থাকে এবং চলাফেরা করে।
- আরেক প্রকারের জিন সাপ এবং মাকড়সার আকারে থাকে।
- শেষ প্রকারের জিন পাখার মাধ্যমে বাতাসে ওড়ে।
জিন জাতির কাজ কি?
এই জিন জাতির কিছু কিছু নাম অনুসারে কার্যকলাপ প্রক্রিয়া বিদ্যমান। যেমন
ইবলিশ, খানজাব, ওলহান, কারীন ইত্যাদি।
- ইবলিশঃ কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, আদম আঃ কে সিজদা / সালাম করতে অস্বীকার করেছিল এই জিন। এই জিন জান্নাতে থাকাকালে আল্লাহর আদেশ অমান্য করতে প্ররোচিত করেছিল আদম আঃ কে। এছাড়াও এই ইবলিশ জিন দুনিয়াতে মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে। আর মুসলিমরা এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে।
- খানজাবঃ সাধারণত মানুষদের মনের চিন্তা ঢুকিয়ে অথবা সালাতরত অবস্থায় নানা রকম দুশ্চিন্তা বা অমনোযোগী ও উদাসীন করে তোলে এই খানজাব জিন।
- ওলহানঃ একপ্রকার জিন শয়তান হচ্ছে ওলহান জিন। এদের কাজ হচ্ছে মানুষকে ওযুর সময় ওয়াসওয়াসা দেয়।
- কারীনঃ কারীন শব্দের অর্থ হচ্ছে সঙ্গী। সঙ্গী হিসেবে প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জিন লেগে থাকে সবসময়। এরা বান্দাকে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে। এদের প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষের মনে খারাপ চিন্তা নিয়ে আসা।
জিন জাতির বাসস্থান
জিন জাতি মানুষের পরিত্যক্ত স্থানে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। সাধারণত
তারা মানুষের বসবাসের স্থানে থাকে না। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ জিন জাতি মানুষের
থেকে অনেক দূরে নির্জন এলাকায় বসবাস করতে ভালোবাসে।
তবে কিছু প্রজাতির জিন জাতি আছে যারা মানুষের সাথে লোকালয়ে থাকতে ভালোবাসে।
এক হাদিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পাওয়া যাই, যেখানে মানুষের ময়লা এবং খাবারের
উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে রাখা হয় অর্থাৎ নোংরা ও গন্ধময়ী জায়গায় থাকতে পছন্দ
করে জিন জাতিরা।
জিন জাতির খাদ্য
জিন মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার খায়। এছাড়াও গোবর হাড় ইত্যাদি খেয়ে থাকে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাঃ বলেছেন - জিনদের একজন
আমাকে ডাকলে একদিন আমি তার সাথে যাই। সেখানে আমি তাদের জন্য কুরআন পাঠ করি
এবং সেই স্থানে আরো জিন ছিল। তারা সেখানে কিছু প্রশ্ন করেছিল।
প্রশ্নগুলো এই যে, খাবারের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমি বলি আল্লাহর নাম
করে খাওয়া হয় এমন যেকোনো হার তোমাদের সামনে মাংসতে পরিণত হয়ে যাবে। ঠিক
সেই একইভাবে তোমাদের পশুদের খাবার হয়ে যাবে গোবর। তাই টয়লেট করার পরে
তোমাদের কেউ যাতে এই শুকনো হার গোবর দিয়ে নিজেকে পরিষ্কার না করে। কারণ সেটি
তোমাদের ভাইদের খাবার।
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূল সাঃ উল্লেখ্য করেছেন -
জিনদের প্রধান খাবার গোবর এবং হাড়। তার সাথে দেখা করতে আসে জিনদের একটি দল
নসিবাইন শহর থেকে। তারা খুব বিনয়ী ছিল। নবীজির কাছে তারা মানুষের উচ্ছিষ্ট
খাবারের সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। অতঃপর নবী আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল এই
যে, তারা এমন কোন গোবর বা হার অতিক্রম করবে না যা তাদের জন্য খাবার না হয়ে
যায়।
জিন জাতির আকার বা রূপ ধারণ
হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, জিন জাতি মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর আকার ধারণ করতে
পারে এবং মানুষের মত কথা বলতে পারে। ইবলিশ শয়তান বদরের যুদ্ধে মক্কার
কুরাইশদের কাছে বনু কিনানাহর সরদার সুরক্ষা ইবনে রুসাম এর আকার ধারণ করে
রাসূল সাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্ররোচনা দিয়েছিল তাদেরকে।
জিনের চলাচলের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা
হাদিসে বর্ণিত আছে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে পাওয়া গেছে, রাসুল সাঃ বলেন
-
অবশ্যই সেই সময় তোমাদের সন্তানদের ঘরের বাইরে যেতে বারণ কর সন্ধ্যার
শুরুতে যখন রাত নামে। কারণ এই সময় বের হয়ে থাকে সমস্ত শয়তান। এই সময়
আল্লাহর নাম নিয়ে ঘরের দরজা গুলো বন্ধ কর। প্রায় এক ঘণ্টা পার হয়ে আসলে
সন্তানদের যেতে দিও। তার কারণ হচ্ছে এই শয়তান দরজা খুলতে পারে না।
এছাড়া আরো তথ্য পাওয়া যায় যে, আল্লাহর নাম নিয়ে পানির পাত্রে সমস্ত মুখ
বন্ধ রাখবে। যদি এমনটা হয় ঢেকে রাখার মতো হাতের কাছে কিছু নেই তবে উপরে
কিছু দিয়ে রাখো যেমন বই বা কাঠ ইত্যাদি। আর রাতে সবার সময় অবশ্যই খুবই
বাতি নিভিয়ে শুতে হবে।
সর্বশেষ জিন জাতি নিয়ে পরামর্শমূলক কিছু কথা
জিন জাতি, এরাও মানুষের মতই মুসলিম ও অমুসলিম জাতিতে বিভক্ত রয়েছে। এদের
মধ্যেও ভালো খারাপ দুটোই রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। তাই
সমস্যা যেমন আছে সমাধানও আছে। আমরা সঠিক পথে চলার চেষ্টা করব এবং আল্লাহর
কাছে আশ্রয় চাইবো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সবকিছু সমাধানকারী। তিনিই
সর্বশ্রেষ্ঠ।