চুলের জন্য সরিষার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি চুলের জন্য সরিষার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? যদি
তাই হয়ে থাকে তাহলে আজকের এই পোষ্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে জানানো হয়েছে
যে, চুলের জন্য সরিষার তেলের উপকারিতা, ব্যবহারের কারণ ও সমস্ত নিয়মাবলী।
এছাড়াও চুলের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহারে যেসব ভুল একদমই করা যাবে না তা সম্পর্কে
নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তাই দেরি না করে মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। চুলের যত্নে সরিষার তেল
সম্পর্কে আরো অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন এই পোস্টে। আশা করছি পোস্টটি পড়ে
আপনি বেশ উপকৃত হবেন।
পোস্ট সূচীপত্র: চুলের জন্য সরিষার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
ভূমিকা
অনেকেরই ধারণা চুলের যত্নে নারিকেল তেলের উপরে আর কিছুই নেই। অবশ্যই আমি বলবো
নারিকেল তেলের কদর বেশি তবে চুলের যত্নে সরিষার তেল অনেক বেশি উপকারী। চুলের
যত্নের তালিকায় নিয়মিত সরিষার তেল রাখলে চুলের অনেক ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি
পাবেন। আপনার যদি নারিকেল তেল ব্যবহার করার অভ্যাস থাকে তাহলে আমি বলবো না যে
এখনই অভ্যাসটি পরিহার করুন। তবে হ্যাঁ নারকেল তেলের পাশাপাশি আপনি মাঝেমধ্যে
সরিষার তেল ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
আশা করছি আপনি ভাল ফলাফল পাবেন। সরিষার তেল একটু ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত তাই সরিষার
তেল ব্যবহারের পর সুগন্ধি কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিবেন। সরিষার তেল
কন্ডিশনারের কাজ করে। তবে সরিষার তেল ব্যবহারের পাশাপাশি শ্যাম্পু করার পর যদি
আপনি আরও একটি কন্ডিশনার ব্যবহার করেন তাহলে চুল আরও সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও
ঝলমলে করে তুলবে।
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন
প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নে সরিষার তেলের ব্যবহার অনেক বেশি। আগেকার মানুষদের
কাছে শোনা চুলে জট পরা, রোগাটি ভাব দূর করতে এবং মোলায়েম করে তুলতে সরিষার তেল
ব্যবহার করতো। তাই চলুন নিচে জেনে নেই চুলের জন্য সরিষার তেলের উপকারিতা কতটা
বেশি।
চুলের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহার করার কারণ
সাধারণত অধিকাংশ মানুষেরই চুল পড়া সমস্যা রয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন যে, চুলের
ফলিকল দুর্বল হয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে চুল পড়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান ও
প্রতিকার হিসেবে কাজ করে একমাত্র সরিষার তেল। তাই চুলের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহার
করার কারণ নিচে দেওয়া হলো:
- সরিষার তেল নিয়মিত চুলে ব্যবহার করার ফলে চুলের ফলিকল সবল করে তুলে। যাতে চুল মজবুত হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়।
- অনেক সময় মাথার ত্বক চুলকায় এবং খুশকি হয়। এটি দূর করতে সরিষার তেলের কার্যকারিতা অনেক বেশি। কারণ সরিষার তেলে থাকে এ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান।
- অনেকের চুল বড় হয় না। সরিষার তেলে ওমেগা তিনটি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা দ্রুত চুল বড় করতে সাহায্য করে।
- অনেকের চুল বড় থাকলেও তা সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল হয় না। সরিষার তেল ব্যবহারে কন্ডিশনারের কাজ করে। যার জন্য চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জল করে তোলে।
- অনেকের চুল রুক্ষ রুক্ষ ভাব থাকে দেখে মনে হয় নিষ্প্রাণ ও শুষ্ক হয়ে গেছে। মাথার ত্বকে সরিষার তেল ম্যাসাজ করার কারণে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। যার জন্য চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহারের নিয়ম
নিয়ম মাফিক ব্যবহার করলে ফলাফল ভালো পাওয়া যায়। তাই চলুন জেনে নেই চুলের
যত্নের সরিষার তেল ব্যবহার করার নিয়ম:
- ধনিয়া গুড়া, লেবুর রস ও সরিষার তেল ভালো ভাবে মিশ্রণ করুন। চুলের যত্নের তালিকায় এই মিশ্রণটি নিয়মিত মাস্ক হিসেবে রাখুন। প্রায় আধা ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল ঘন কালো মজবুত ও খুশকি মুক্ত হবে।
- সরিষার তেল ও অ্যালোভেরা মিশ্রিত করুন। মাথার ত্বকে লাগিয়ে আধা ঘন্টা রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এই পদ্ধতির উপকারিতা হচ্ছে চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলকে স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করে।
- টক দই ও সরিষার তেল দুটোই চুলের জন্য বেশ উপযোগী। তাই এই দুটি উপকরণ একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। গরম তোয়ালে দিয়ে মাথা চুল গুলো পেচিয়ে নিন। প্রায় এক ঘন্টা হয়ে আসলে শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুইবার এটি করতে পারেন।
- একটি পাকা কলা চটকে তার সাথে দই ও সরিষার তেল মিশ্রিত করুন। মাথার ত্বকে মিশ্রণটা ভালো ভাবে ম্যাসাজ করুন। আধা ঘন্টা বা একঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে অবশ্যই কন্ডিশনাল লাগাতে ভুলবেন না। সুর শুকিয়ে আসলে দেখবেন চুল উজ্জ্বল, নরম, মসৃণ ও মজবুত হয়েছে।
- শীতে চুল মসৃণ রাখা খুব জরুরী। তাই চুলের মসৃণতা ভাব ধরে রাখতে অনেককেই বিভিন্ন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করে থাকে। তবে মনে রাখবেন সব ধরনের হেয়ারমাক্স সবার চলে ত্বকের জন্য উপযোগী নয়। তাই নিঃসন্দেহে সরিষার তেল ও লেবুর রস এর মিশ্রণ সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা এই মাস্কটি চুলে রাখা যায়। এরপর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলবেন। দেখবেন চুল মসৃণ হওয়ার পাশাপাশি চুল পড়া রোধ করবে।
চুলে সরিষার তেল ব্যবহারে যেসব ভুল করা যাবে না
মানতেই হবে চুলের যত্নে সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক বেশি। তবে উপকারিতা পাওয়ার
জন্য সরিষার তেল ব্যবহারে চুলের জন্য অপকারী ও হয়ে উঠতে পারে। নিয়ম মাফিক
ব্যবহার না করলে এই যত্নই চুলের জন্য হিতে বিপরীত হয়ে যায়। সরিষার তেল থেকে
মাথার ত্বকে কোন সংক্রমণ ঘটতে পারে। নিচে কিছু নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো:
- অনেকের সরিষার তেলে এলার্জি থাকে। তাই সরিষার তেলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে তবেই চুলের যত্নে এটি ব্যবহার করুন।
- যাদের অয়েলি স্ক্যাল্প আছে বা তেলতেলে ভাব আছে তারা মাথার ত্বকে সর্ষের তেল একদমই লাগাবেন না। যদি লাগিয়ে থাকেন তবে ত্বকের পোরস আটকে যায়। এতে করে চুলের হাইড্রেশন কমে যায়। যার ফলে চুল নষ্ট হয়ে যায়।
- ঠান্ডা অবস্থায় সরিষার তেল ব্যবহার করবেন না তেলটি একটু গরম করে চুলে লাগান। সরিষার তেল অনেক ভারী তাই গরম করলে তেলটি অনেক পাতলা ও হালকা হয়ে যায়। ফলে চুলের ত্বক সরিষার তেল শোষণ করতে সুবিধা হয়। প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে।
লেখক এর মন্তব্য
চুলের যত্নে সরিষার তেলের বিকল্প অনেক বেশি। চুলকে ডিপ কন্ডিশনিং করে তোলে সরিষার
তেল। সরিষার তেল নিয়মিত চুলে ব্যবহার করার ফলে চুল নরম ও উজ্জ্বল থাকে। ডগা
ছেঁড়া চুল দূর করে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল উপহার দেয় আমাদের এই বিখ্যাত সরিষার
তেল। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে য, আমাদের আদিম কালের দাদীমাদের আমলে এত বিউটি
প্রোডাক্ট কিন্তু ছিল না। তবে তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মাধুর্য ছিল।
আরো পড়ুনঃ পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
সাধারণত তারা চুলে সরিষার তেল লাগিয়ে চুলের মাধুর্য ধরে রাখতো। আর এখন বর্তমান
সময়ে সরিষার তেল ব্যবহার হয় শুধুমাত্র রান্নার কাজে বা সালাদ ও আচার এ। কিন্তু
আদিম যুগের মত বর্তমান সময়েও চুলের যত্নে সরিষার তেলের ভূমিকা অনেক বেশি। তবে
ফলাফল পেতে সঠিক গাইডলাইন ও সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আমার মতে
সবচেয়ে ভাল হয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।