টাক মাথায় চুল গজানোর উপায় জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি টাক মাথায় চুল গজানোর উপায় জানতে চান? দিন দিন আপনার মাথার
চুল পড়ে টাক হয়ে যাচ্ছে? যদি তাই হয় তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। কারন এই
পোস্টে টাক মাথায় চুল গজানোর উপায় জানানো হয়েছে। এছাড়াও টাক মাথার সমস্যার সমাধান
দেওয়া আছে। সর্বশেষ লেখকের বিশেষ মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন এবং আপনি বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।
মাথায় টাক পড়ার সমস্যা
মাথার চুল সবার প্রিয়। স্বাভাবিক ভাবে বয়সের সাথে সাথে চুল ঝরে পড়ে। তবে
অতিরিক্ত চুল ঝরে পড়া চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রিয় চুলগুলো যখন পড়তে শুরু
করে তখন মন খুব খারাপ হয় এবং চিন্তায় পড়ে যায়। সে সময় যেনো মন খারাপ আর
দুশ্চিন্তা দুটোই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সঙ্গী হয়ে ওঠে।
যাই হোক টাক পড়ার বিশেষ অংশ হচ্ছে কপালের উপরে মাথার সামনের দিকের চুল। আর এই
সমস্যা থেকে পরিত্রানের উপায় হচ্ছে কিছু তেল ও কিছু ঘরোয়া টোটকা। এমন কিছু পদ্ধতি
রয়েছে যা দ্বারা ঝরে যাওয়া চুল সহজেই ফিরে পাওয়া যায়।
চলুন নিচে জেনে নিই টাক পড়ার সমস্যার সমাধান:
টাক মাথায় চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়
টাক মাথায় চুল গজাতে ঘরোয়া টোটকা গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক
উপায়ে ঘরোয়া উপাদান গুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন
নিচে কিছু ঘরোয়া উপাদানের নাম জানানো হলো:
- মেহেদী পাতা
- পেয়ারার পাতা
- পেঁয়াজ
উপাদানের বিবরণ:
মেহেদী পাতা
যুগ যুগ ধরে আমরা চুলের যত্নে মেহেদী পাতা ব্যবহার করে আসছি। চুলের উচ্ছলতা ধরে
রাখতে ও চুলকে স্বাস্থ্যেজ্জ্বল রাখতে মেহেদী পাতার গুরুত্ব অনেক বেশি। এছাড়াও
চুলে লালচে ভাব নিয়ে আসে মেহেদী পাতা। যাই হোক বিশেষত চুল পড়া বন্ধের ক্ষেত্রে
মেহেদি পাতা নিঃসন্দেহে ব্যবহারের উপযোগী।
পেয়ারার পাতা
অনেকেই চুলের যত্নে পেয়ারার পাতার ব্যবহার হয়তো জানেন না। তবে আজ তা জেনে নিন।
পরিমাণ মতো পানির মধ্যে কিছুটা পেয়ারার পাতা নিয়ে গরম করে যখন গারো রং হয়ে
আসবে তখন তা ঠান্ডা করে নিন। এই গারো পানিটি মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ভালো
ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এটি করতে হবে।
পেঁয়াজ
টাক মাথায় চুল গজাতে পেয়াজ টুকরো টুকরো করে কেটে যেখানে টাক পড়েছে সেখানে
পেঁয়াজ ঘষে ঘষে লাগান অথবা পেঁয়াজের রস ম্যাসাজ করতে পারেন। দিনে দুই বার এটি
করতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে এরপর মধু মাখন।
তেল ও ঘরোয়া উপাদানের মিশ্রণ
- তেল ও মেথি
- তেল ও আমলকি
- সরিষার তেল ও মেহেদি পাতা
- অলিভ অয়েল ও মধু
- অলিভ অয়েল ও ডিম
আপনি যে নারকেল তেল ব্যবহার করেন তার মধ্যে কিছুটা ভাজা মেথি গুড়ো করে ফেলে
রাখুন। প্রায় একদিন পরপর এই তেল মাথায় দিবেন। দেখবেন আপনার মাথায় টাক পড়ার
রোগ সেরে যাবে।
তেল ও আমলকি
টাক মাথায় চুল গজাতে ও চুল বৃদ্ধি করতে আমলকির কার্যকারিতা অনেক বেশি। পরিমাণ
মতো নারিকেল তেল নিয়ে এর মধ্যে শুকনো আমলকি টুকরো একসাথে করে ফুটিয়ে নিন। এরপর
ঠান্ডা করে বোতলে সংগ্রহ করে রাখুন। এই তেলটি নিয়মিত ব্যবহার করুন। এতে টাক
মাথায় চুল গজাবে এবং চুল বৃদ্ধি করবে।
সরিষার তেল ও মেহেদী পাতা
সরিষার তেলের মধ্যে মেহেদি পাতা দিয়ে গুঁড়ো করে নিন। এই তেলটি সপ্তাহে দুইবার
ব্যবহার করতে হবে। বিরক্তিকর হলে অন্ততপক্ষে একবার ব্যবহার করুন এতেও ফল পাবেন।
অলিভ অয়েল ও মধু
পরিমাণ মতো অলিভ অয়েল নিয়ে এর মধ্যে সমপরিমাণ মধু ভালো করে মিশ্রিত করুন। এই
মিশ্রণটি শ্যাম্পু করার অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিট আগে পুরো মাথায় অথবা টাক পড়া
জায়গায় মেখে নিন। ভালো ফলাফল পেতে এটি ছয় মাস ব্যবহার করতে হবে।
অলিভ অয়েল ও ডিম
পরিমাণ মতো অলিভ অয়েলের মধ্যে ডিম মিশ্রিত করুন। সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও টাক
পড়ার জায়গায় এটি ম্যাসাজ করুন। দেখবেন এতে নতুন চুল গজাবে এবং চুল বৃদ্ধি
করবে।
টাক মাথায় চুল গজানো তেলের নাম
- ক্যাস্টর অয়েল
- অলিভ অয়েল
- আমন্ড অয়েল
- ল্যাভেন্ডার অয়েল
- কাঠবাদাম তেল
- নারিকেল তেল
তেলের বিবরণ:
ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এমনটা যদি হয় আপনার টাক
পড়তে কেবলমাত্র শুরু হয়েছে তবে দেরি না করে অবশ্যই নিঃসন্দেহে ক্যাস্টর অয়েল
ব্যবহার করা আরম্ভ করুন। অতি শীঘ্রই টাক পরা রোগ সেরে যাবে। কারণ ক্যাস্টর অয়েলে
রিসিনোলেইক অ্যাসিড রয়েছে। যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল
ওজন কমানোর পাশাপাশি চুল পড়া রোধ করে অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েলে রয়েছে ভিটামিন-এ
এবং ভিটামিন-ই। যার কারনে টাক পড়া মাথায় চুল গজাতে সাহায্য করে এই অলিভ অয়েল।
আমন্ড অয়েল
আমন্ড ওয়েলের রয়েছে ভিটামিন-ই। আমন্ড অয়েল নষ্ট হয়ে যাওয়া চুলকে ফিরিয়ে
আনতে সাহায্য করে। ব্যস্ততার কারণে অযত্নে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আর এই
ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে প্রাণবন্ত করে তোলে আমন্ড অয়েল। এক কথায় টাক পড়া সারিয়ে
তুলতে আমন্ড অয়েলের কার্যকারিতা অনেক বেশি। যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর
কাজ করে।
ল্যাভেন্ডার অয়েল
ল্যাভেন্ডার অয়েলে রয়েছে, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি
উপাদান। যা চুল ঝরে পড়া সমস্যা সমাধান করে। এই ল্যাভেন্ডার অয়েল যাদের টাক
পড়েনি তারাও ব্যবহার করতে পারেন। যাতে করে পরবর্তীতে টাক পড়া সমস্যায় ভুগতে
হবে না।
কাঠবাদাম তেল
অনেকের এই সমস্যাটি রয়েছে যেমন হঠাৎ খুব বেশি চুল উঠতে থাকে। আমরা মনে করে থাকি
এটি হয়তো ঋতুভিত্তিক সমস্যা। আর এই সমস্যার সমাধানে রয়েছে কাঠবাদাম তেল। তাই
আপনার যদি হঠাৎ করে চুল বেশি পরিমাণে উঠতে থাকে তাহলে কাঠ বাদাম তেলটি ব্যবহার
করে দেখতে পারেন। আপনি এতে উপকৃত হবেন।
নারিকেল তেল
এই তেলটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। বেশ জনপ্রিয় একটি তেল হচ্ছে নারিকেল তেল। কম
বেশি সকলেই এই তেলটি ব্যবহার করেছি এবং এর উপকারিতা আমরা জানি। তাই নারিকেল তেলের
বিষয়ে নতুন করে আর কিছুই বলার নেই। শুধু এটুকুই বলবো টাক পড়া সমস্যায় নারিকেল
তেলের উপর ভরসা রাখতে পারেন। এটি ব্যবহারে আপনার চুল গজাতে সাহায্য করবে।
টাক পড়ার সমাধানে পর্যাপ্ত ঘুম
আমরা হয়তো সকলেই জানি স্বাভাবিক ভাবে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। কারণ
ঘুমন্ত অবস্থায় মানব শরীর মেরামত হয়। এর সাথে সাথে হেয়ার গ্রোথ ভালো রাখে ঘুম।
তাই ঘুম কম হলে অসময়ে টাক পড়ে যায়। বয়সের তুলনায় কম হলেও চুল ঝরে পড়ে যায়।
এজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। এতে মাথার ত্বক ভালো থাকবে।
লেখক এর মন্তব্য
প্রায় অধিকাংশ মানুষই টাক পড়া নিয়ে অস্বস্তি ভোগ করছেন। আমার দেওয়া একটি টিপস
হচ্ছে, হেয়ার গ্রোথ বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। এতে আরাম
পাওয়া যায় ঘুম ঘুম ভাব হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। আশা করছি উপরিক্ত
লেখাগুলো আপনাদের এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তবে সব উপাদান সবার জন্য
প্রযোজ্য না। কারো কারো কোন উপাদানে এলার্জি থাকতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার সহজ উপায় জানুন
আবার কারো কারো এই উপাদান গুলো
ব্যবহারে প্রথম দিকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও হরমোন জনিত সমস্যার কারণেও
টাক পড়ে যেতে পারে। তাই আমার মতে, সবচেয়ে ভালো হয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী
প্রতিটি পদক্ষেপ নেওয়া। সবশেষে বলতে চাই, পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার মূল্যবান মতামতটি কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানিয়ে দেবেন।
জিসান স্প্ল্যাশ খুব যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে, ধন্যবাদ।