চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় খুঁজছেন? চুল পড়া নিয়ে
আপনি খুব চিন্তিত? শত চিন্তা করেও চুল পড়া সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না? তাহলে
আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
সম্পর্কে জানানো হয়েছে। শুধু ঘরোয়া উপায় নয়, অন্যান্য উপায় সমূহ তুলে ধরা
হয়েছে।
এই পোষ্টটি পড়ে আমাদের মা, বোন ও ভাইয়েরা চুল পড়ার সমস্যার সম্মুখীন হতে
পারবেন। নতুন চুল গজাঁতে সাহায্য করবে। তাই দেরি না করে মনোযোগ সহকারে পুরো
পোষ্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি আপনি পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন।
পোস্ট সূচিপত্র: চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন
ভূমিকা
স্বাভাবিক ভাবে ধরা হয় ২৪ ঘন্টায় ১০০ টি করে চুল পড়তে পারে। তবে এর বেশি চুল
পড়া অস্বাভাবিক। চিন্তার কোন কারণ নেই। কিছু ঘরোয়া উপায়ে এই সমস্যার সম্মুখীন
হতে পারবেন। অনেকেই চুল পড়া নিয়ে অত্যন্ত ভাবনা চিন্তায় পড়ে থাকেন। চুল পড়ার
সমস্যা নিয়ে একদমই দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।
আধুনিক যুগে জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটেছে। সেই সাথে উন্নতি হয়েছে ঘরোয়া উপায়ের।
ঘরোয়া উপায়ের ক্ষেত্রে চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব। তবে অনেকের শারীরিক সমস্যার
কারনে চুল পড়ে থাকে, এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
চুল পড়ার পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে কেবলমাত্র ঘরোয়া উপায়ে ফিরে পেতে পারেন
আপনার হারানো সুন্দর চুল গুলো। আপনি যদি ঘরোয়া উপায়ে আপনার হারানো চুল ফিরিয়ে
নিয়ে আসতে চান তাহলে মাত্র ২ সপ্তাহ আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। খুবই স্বল্প সময়ে
আপনি ফলাফল পেয়ে যাবেন। চলুন তাহলে নিচে জেনে নেই চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া
উপায়:
আমরা অনেকেই জানি পেয়াজ মাথার ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। কিন্তু রসুন ও আদার রস
চুল পড়া বন্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে সেটি হয়তো অনেকে জানা নেই। আমরা
ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়া বন্ধ করতে চাই। তাই আমাদের ব্যবহার করতে হবে আদার রস,
রসুন ও পেঁয়াজ।
ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এই তিনটি উপাদানের রস রাতে ঘুমানোর সময় মাথার ত্বকে
ভালো ভাবে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। সারারাত রাখার পর সকালে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
প্রায় এক সপ্তাহ এটি করতে থাকুন। আরো ভালো ফলাফল পেতে ১ থেকে ২ সপ্তাহ এই পদ্ধতি
অনুসরণ করুন। দেখবেন ফলাফল আপনি হাতেনাতে পেয়ে গেছেন।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
- প্রথমেই লক্ষ্য রাখবেন আপনার শরীরে পানির শূন্যতা আছে কি না? কারণ পানি শূন্যতার কারণে অতিরিক্ত বেড়ে যায় চুল পড়ার পরিমাণ। তাই অস্বাভাবিক ভাবে যদি চুল পড়তে থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার শরীরে হয়তো পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছে। তৎক্ষণাৎ দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করুন।
- গোসলের পর ভেজা চুল একদমই আঁচড়ানো যাবে না।অনেক মেয়েরাই এই বিষয়টি মেনে চলে কিন্তু ছেলেরা একদমই মানে না। এ সময় চিরুনি দিয়ে চুল আঁচরাতে গেলে চুল পড়ার সম্ভাবনা অধিক হারে বেড়ে যায়। কারণ চুলের গোড়া নরম থাকে ভেজা অবস্থায়।
- নিম ও অ্যালোভেরা যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করার অভ্যাস করুন। নিম ও অ্যালোভেরার কারণে মাথা ঠান্ডা থাকে এবং চুল কম ঘামে। মাথার ত্বক যাতে তৈলাক্ত না হয় সেদিকে সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রায় বেশির ভাগ মানুষেরই মাথার ত্বক বেশি ঘামে ফলে ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। আর এই ঘামের কারণে মাথার ত্বকে ময়লা জমে থাকে। ফলে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়। যেহেতু পুরুষেরা বেশি সময় বাইরে অবস্থান করে সেহেতু পুরুষের চুল পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- চুল সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। চুল যদি অপরিষ্কার থাকে তবে খুশকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও মাথার ত্বকে সংক্রমনের আশঙ্কা অধিক হারে বেড়ে যায়। কাজেই চুল পরিষ্কার রাখা জরুরি।
- ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলতে সাহায্যকারী উপায় হচ্ছে ভিটামিন ই। তাছাড়া ভিটামিন ই চুলের স্বাস্থ্যকর রঙ বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই চুলের গোড়ায় ভিটামিন ই ব্যবহার করুন। এতে চুল পড়ার সমস্যার সমাধানে বেশ কার্যকরী।
- হরমোনের ভারসাম্য ও স্ট্রেস এর মাত্রা বেশি থাকলেও চুল পড়তে পারে। তাই নিজেকে সময় দিন। অন্ততপক্ষে আধা ঘণ্টা হলেও হাটাহাটি করুন। পাশাপাশি অন্যান্য কাজ যা করলে আপনার ভালো লাগবে সেটি করুন। এতে স্ট্রেস কমবে এবং চুল পড়ার সমস্যাও কমবে।
- মদ্যপান ও ধূমপান করলে মাথার ত্বকের প্রবাহিত রক্তের পরিমাণ কমতে থাকে। যার ফলাফল অধিক হাড়ে চুল পড়ে। আর এই সমস্যাটি পুরুষ মানুষের বেশি দেখা দেয। তাই ধুমপান এড়িয়ে চলুন চুলের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ থেকে মুক্ত হন।
- মানুষের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি কম হলে চুল পড়ে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুন। আমরা অনেকেই কিছুদিন পরপর খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে থাকি। যা আমাদের শরীর ও ত্বকের জন্য খুব ক্ষতিকর। চুলের অবনতি ঘটায় এবং চুল পরা বৃদ্ধি করে।
- গ্রিন টি চুলের জন্য বেশ উপকারী। এটি চুলকে মজবুত করে, চুলে পুষ্টি যোগায় এবং আগা ফাঁটা রোধ করে। গোসলের প্রায় এক ঘন্টা আগে দুই ব্যাগ গ্রিন টি এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে নিন। তারপর ছেলে ঠান্ডা করুন। এবার চুলে আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। এক ঘন্টা হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। ১০ থেকে ১২ দিন একটানা একটি করতে থাকুন। ১৫ দিনের মধ্যে ফলাফল পাবেন।
আরো পড়ুনঃ চিকন থেকে মোটা হওয়ার উপায় জেনে নিন
উপরি উক্ত নিয়ম গুলো কমপক্ষে দুই সপ্তাহ অনুসরণ করে চলুন। আপনার চুল পড়ার
সমস্যা খানিকটা হলেও কমে যাবে। আপনি চিন্তা মুক্ত হবেন। যদি সেটিও না হয় তবে
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চুলের যত্নে সরিষার তেলের উপকারিতা
আমরা সকলেই জানি যুগ যুগ ধরে সরিষার তেলের গুরুত্ব অনেক। তবে আজ জেনে নেই চুলের
যত্নে সরিষার তেল কতটা কার্যকরী। নিম্নে চুলের যত্নে সরিষার তেলের উপকারিতা
দেওয়া হল:
- চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সরিষার তেলের ব্যবহার খুব কার্যকরী। অন্যান্য তেলের পরিবর্তে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুল পড়া কমায়। পাশাপাশি চুলে নিয়ে আসে প্রাকৃতিক জৌলুস। নিয়মিত ব্যবহার করুন ফলাফল মিলবেই।
- প্রায় আধা ঘন্টা এ্যালোভেরা ও সরিষার তেল চুলে লাগিয়ে রাখুন । সপ্তাহে দুদিন এটি ব্যবহার করুন। খুব ব্যস্ত থাকলে একদিনও এটি করতে পারেন। গোসলের প্রায় আধা ঘন্টা আগে ধনিয়া গুঁড়, লেবুর রস ও সরিষার তেলের মিশ্রণ চুলে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করুন। আধা ঘন্টা হয়ে গেলে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। এতে চুল শক্তিশালী হয় এবং খুশকি মুক্ত থাকে।
- সরিষার তেল ও টক দই চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন। এরপর গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে মাথায় পেঁচিয়ে নিন। আধা ঘন্টা হয়ে গেলে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুই একবার ব্যবহার করতে পারবেন।
সর্বশেষে পরামর্শ মূলক কথা
মনে রাখবেন দিনশেষে শুধু আপনি আপনার। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে সময় দিন।
নিজের জন্য কিছু করুন। নিজের যত্ন নিন। স্বাস্থ্যকর চুল পেতে হলে সঠিক পুষ্টির
প্রয়োজন হয়। তাই ওপরে উক্ত লেখাগুলো অনুসরণ করে চুলের পুষ্টি পুনরায় ফিরিয়ে
আনার চেষ্টা করুন। হারানো চুল গুলো ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করুন। চুলের সৌন্দর্য
বৃদ্ধি করুন। এতে মন ও শরীর স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে।