চোখের নিচের কালো দাগ সারানোর ঘরোয়া উপায় জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি চোখের নিজের কালো দাগ সারানোর ঘরোয়া উপায় জানতে চান?
আপনার চোখের নিচে কালো দাগ দেখা দিয়েছে? কিভাবে তা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে
ঘরোয়া উপায়ে দূর করবেন ভেবে পাচ্ছেন না? যদি তাই হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনার
জন্য। কারণ এই পোস্টে চোখের নিজের কালো দাগ সারানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানানো
হয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন এবং আপনি বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।
কোন ভিটামিনের অভাবে চোখের নিচে কালো দাগ হয়
মুখের সৌন্দর্যহানি হয় চোখের অসৌন্দর্যতায়। কারণ মুখের বেশি শতাংশ সৌন্দর্য
নির্ভর করে চোখের উপর। অনেকে ধারণা করে যে, রাত জাগলে চোখের নিচে কালো দাগ পরে।
তাই একটু চোখের নিচে কালি দাগ পড়লেই শুরু হয়ে যায় কফি খাওয়া ও নানান
রূপচর্চা। তবে এ সমস্যাটি যে শরীরের ভিতরে হয়েছে তা কেউ খুতিয়ে দেখে না। নানা
চিকিৎসাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা একই মত পোষণ করেছেন যে, ভিটামিন-ডি এর অভাবে চোখের নিচে
কালো দাগ পরে। শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব হলে তার প্রমাণ দেয় চোখের নিচে কালো দাগ
পড়ে।
চোখের নিচে কালো দাগ কোন রোগের লক্ষণ
আমাদের চোখের নিচের মেদ খুবই স্বল্প মাত্রায় থাকে যার জন্য স্বাস্থ্যকর মেদ ঝড়ে
গেলে চোখের নিচে কালো দাগ দেখা দেয়। এছাড়াও কিছু রোগের লক্ষণ দেখা দেয় চোখে
নিচে কালো দাগ। যেমন:
- মানসিক চাপ
- শরীরে ওজন কমে যাওয়া
- অনিদ্রা বা ঘুম কম হওয়া
- ত্বকে এ্যালার্জি
নিচে লক্ষণ গুলো ব্যাখ্যা করা হলো:
আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যাথা কমানোর ঔষধের নাম জেনে নিন
মানসিক চাপ
মানুষ যখন মানসিক চাপে ভুগতে থাকে তখন সে প্রতিনিয়ত চিন্তিত থাকে বা কিছু না কিছু
ভাবতে থাকে। আর এভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে চোখের নিচে কালি দাগ পড়বে এটাই
স্বাভাবিক।
শরীরে ওজন কমে যাওয়া
অনেকের শরীরের ওজন হঠাৎ করে কমে যায় আবার অনেকে ডায়েট করে শরীরের ওজন কমিয়ে
থাকে। তবে যেটি হোক না কেন শরীরের ওজন তুলনামূলক কমতে থাকলে চোখের নিচে কালো দাগ
দেখা দেয়।
অনিদ্রা বা ঘুম কম হওয়া
অনেকেরই রাত জাগার অভ্যাস থাকে না তবুও রাত জাগার চেষ্টা করে আবার অনেকে
ব্যস্ততার কারণে টানা কয়েক রাত ঘুমাতেই পারে না। নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম
সবার জন্য জরুরী। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত পরিমাণে তুলনায় ২/১ ঘন্টা ঘুম কম
হলেও তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। এর চেয়ে অতিরিক্ত ঘুম নাহলে চোখের জন্য
ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। তার লক্ষণসরূপ হচ্ছে, চোখের নিচে কালো দাগ
ত্বকে এ্যালার্জি
চোখে এ্যালার্জির কারণে চোখ অনবরত চুলকাতে থাকে। ফলে চোখের নিচে নরম চামড়া ফুলে
যায় এবং চোখের নিচে কালো দাগ দেখা দেয়।
চোখের নিচের কালো দাগ সারানোর ঘরোয়া উপকরণ
- শসার রস
- টমেটোর রস
- কমলার রস
- আলু
- দুধ
- বাদাম তেল
- রোজ ওয়াটার
- টি ব্যাগ
ঘরোয়া উপকরণ গুলোর বিবরণ ও কার্যকারিতা
শসার রস এর ব্যবহার-
- পরিমাণ মতো শসা ব্লেন্ড করে শসার রস বের করে আলাদা করে নিন।
- একটি কটন প্যাড বা তুলোর সাহায্যে শসার রস সংরক্ষণ করুন।
- এবার এটি চোখের নিচে লাগিয়ে ১৫/২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এটি নিয়মিত ব্যবহারে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ টাক মাথায় চুল গজানোর উপায় জানুন
টমেটোর রস এর ব্যবহার-
- পরিমাণ মত টমেটো নিয়ে এর ভেতর থেকে রস সংগ্রহ করে নিন।
- এবার ভেজা তুলোর সাহায্যে চোখের নিচে লাগান।
- ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- এবার হালকা গরম পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
- এটি প্রতিদিন দুবার করবেন ব্যস্ততা থাকলে একবার করলেও চলবে।
ভালো ফলাফল পেতে টমেটোর রসের জুস বানিয়ে খেতে পারেন। এতে ত্বক স্বাস্থ্যজ্জল
থাকবে।
কমলার রস এর ব্যবহার-
- কমলা চেপে তা থেকে রস আলাদা করে নিন।
- এবার সেই কমলার রস এর সাথে দুই ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন।
- কটন প্যাড বা তুলোর সাহায্যে এটি চোখের কালো স্থানে লাগান।
চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে কমলার রস এর কার্যকারিতা অনেক বেশি। এটি কালো দাগ
দূর করে এবং এর পাশাপাশি আরো উজ্জ্বল করে তোলে।
আলু এর ব্যবহার-
- কিছুটা পরিমাণে খোসাসহ আলু ভালো করে ধুয়ে নিন।
- এবার সেটি বেটে আলুর পেস্ট তৈরি করুন।
- সেই আলুর পেস্ট চোখের কালো স্থানে মাখিয়ে নিন।
- কিছুক্ষণ রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আলুর পেস্ট চোখের নিচে কালো দাগ খুব দ্রুত দূর করে। তাই যাদের এই সমস্যা রয়েছে
তারা অবশ্যই এই পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে দেখবেন।
দুধ এর ব্যবহার-
- কিছুটা পরিমাণে ঠান্ডা দুধ নিন।
- কটন প্যাড বা তুলোর সাহায্যে ঠাণ্ডা দুধ চোখের কালো স্থানে লাগান।
- এবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ঠান্ডা দুধ নিয়মিত ব্যবহারে চোখের নিচে কালো দাগ দূর হয়ে যায়। তাছাড়া চোখের
ফোলা ভাব দূর করে।
বাদাম তেল এর ব্যবহার-
- ছোট্ট একটি বোলে বাদাম তেল নিন।
- রাতে ঘুমোনোর আগে চোখের কালো অংশে বা চোখের চারপাশে বাদাম তেল ম্যাসাজ করুন।
- তারপর টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলতেও পারেন বা রেখে দিতেও পারেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।
বাদাম তেল নিয়মিত ব্যবহারে চোখের কালো দাগ দূর হয়ে যায়। তাছাড়া চোখের চামড়া
কুঁচকে যাওয়া রোধ করে। ত্বকে টান টান ভাব নিয়ে আসে।
রোজ ওয়াটার এর ব্যবহার-
- পরিমাণ মতো রোজ ওয়াটার নিন।
- এবার কটন প্যাড বা তুলোর সাহায্যে রোজ ওয়াটার সংরক্ষণ করুন।
- কটন প্যাক বা তুলোটি চোখের কালো স্থানে টাচ্ আপ করুন।
- একটু শুকিয়ে এলে আবার একটু পর পর একটু করে টাচ আপ করে নিতে হবে এভাবে ১৫ মিনিট রাখতে হবে।
- তারপর নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেললেও হবে বা হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেও হবে।
- প্রোসেসটি দিলে দুই বার বা তার থেকে যত বেশি করবেন ততই ভালো।
রোজ ওয়াটার বলতে, গোলাপ ফুলের পাপড়ির নির্যাস থেকে তৈরি করা হয়। রোজ ওয়াটারে
রয়েছে মন মাতানো সুগন্ধি। এছাড়াও রোজ ওয়াটার ত্বকের সমস্ত ক্লান্তি দূর করে
দেয়। ত্বককে করে তোলে সতেজ ও স্বাস্থ্যজ্জল।
টি ব্যাগ এর ব্যবহার-
- টি ব্যাগটি অবশ্যই ঠান্ডা হতে হবে।
- চোখের কালো স্থানে ঠান্ডা টি ব্যাগটি ১০/১৫ মিনিট এর মতো রাখুন।
- এটি রাতে শোবার আগে করবেন।
ভালো ফলাফলের জন্য টি ব্যাগটি ঠান্ডা বলা হয়েছে। কারো ঠান্ডা টি ব্যাগ চোখের
নিচের কালো দাগ দূর করতে খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে।
পরামর্শমূলক কথা
উপরে দেওয়া উপকরণ গুলো ব্যবহার করলেই যে সব সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন এমনটি
নয়। মনে রাখবে, সব উপকরণ সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। অনেকের ত্বকের অনেক রকম সমস্যা
থাকে। তবে আশা করছি উপরে দেওয়া উপকরণ গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি হলেও আপনার কাজে
আসবে।এছাড়া চোখের নিচের কালো দাগ যদি ভালো হয়েও যায় তারপরেও চিরতরে রেহাই
পেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন।
কারণ কেবলমাত্র প্রাকৃতিক মিশ্রণ দ্বারা চোখের নিচে কালো দাগ দূর হয় না। যদি
আপনার শরীরে ভিটামিনের অভাব থেকে থাকে তাহলে এগুলো কোনোটিই কাজে আসবে না। তাই
শরীরের প্রতি ও খাদ্য অভ্যাসে বিশেষ নজর রাখবেন। মনে রাখবেন, দিনশেষে আপনি আপনার
জন্য। তাই শত ব্যস্ততা থাকলেও নিজেকে সময় দিন। সবশেষে বলতে চাই, পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার মূল্যবান মতামতটি কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানিয়ে দেবেন।
জিসান স্প্ল্যাশ খুব যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে, ধন্যবাদ।