ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় জানতে চান?
অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার ঠোঁটে কালো রঙ ধারন করেছে? কিভাবে ঠোঁটের কালো দাগ থেকে
মুক্তি পাবেন বুঝতে পারছেন না? যদি এমনটি হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ
এই পোস্টে ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন এবং আপনি বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।
ঠোঁটে কালো দাগ কেন হয়
ঠোঁটে কালো দাগ মোটেও চেহারা ভালো দেখায় না। খুবই বাজে লাগে এ বিষয়টি। সাধারণত
আবহাওয়ার পরিবর্তন অথবা শরীরে ভিটামিন এর অভাবে এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। এছাড়া
বিভিন্ন কোম্পানির লিপস্টিক ব্যবহার এর ফলে ঠোঁটে কালো দাগ দেখা দিতে পারে।
অনেকের ঠোঁটে চারপাশে অথবা নাকে দুপাশ থেকে থুতনি পর্যন্ত কালো দাগ দেখা দেয়।
এটিকে সম্ভবত রোদে পড়া ত্বক বলা হয়। তবে এর ভিন্ন ভিন্ন কারণও থাকতে পারে।
ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়া যেসব রোগের লক্ষণ
অনেকেই ভাবে যে, শুধুমাত্র ধূমপান করার কারণে ঠোঁট কালো হয়ে থাকে। তবে এই রকম
ভাবনা বা চিন্তা ধারণা একেবারেই ভুল। বিশেষ কিছু রোগের কারণেও ঠোঁটে কালো রং ধরতে
পারে।
চলুন নিচে জেনে নেই ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়া কোন কোন রোগের লক্ষণ:
- শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে ঠোঁট এর রং কালচে ভাব হয়ে যায়। ঠোঁট এর রং বদলানোর পাশাপাশি পানির ঘাটের কারণে ঠোঁট ফেটে যায়।
- ক্যান্সার রোগের লক্ষণ হিসেবে ঠোঁটে কালো দাগ দেখা দিতে পারে। যদি দেখেন যে, দিন দিন ঠোঁটের কালো দাগ বেশি গাঢ় হচ্ছে, ঠোঁটে ক্ষত চিহ্ন দেখা দিয়েছে বা সেই ক্ষত চিহ্ন থেকে রক্তপাত হচ্ছে তাহলে অতি শীঘ্রই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ এটি নিতান্তই ক্যান্সারের লক্ষণ।
- হরমোনের সমস্যা দেখা দিলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে দাগছোপ দেখা দেয়। হতে পারে সেটি ঠোঁট বা শরীরের অন্যান্য কোন অংশ।
- গর্ভবতী নারীদের বেশির ভাগ ঠোঁটে কালো রং ধারণ করে। আবার জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনের ফলেও একি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- লিপস্টিক বা লিপবাম ব্যবহারের ফলে এ্যালার্জি সৃষ্টি হয়। সে অ্যালার্জির কারণে ঠোঁটে কালচের রং ধারণ করে।
ঠোঁটে কালো দাগ সারাতে ঘরোয়া টোটকা বিকল্প কিছু নেই। প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরোয়া
পদ্ধতিতে ঠোঁটে কালো দাগ সারানো যায় খুব সহজেই।
আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যাথা কমানোর ঔষধের নাম জেনে নিন
চলুন নিচে জেনে নিই ঠোঁটে কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়:
ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
- নারিকেল তেল
- চিনি
- মধু
- গ্লিসারিন
- গোলাপজল
- এ্যালোভেরা
- শসা
- লেবু
- হলুদ
- চুন
ঠোঁটের কালো দাগ দূর করতে ঘরোয়া উপায় গুলোর বিবরণ ও কার্যকারিতা
নারিকেল তেল এর ব্যবহার-
নারিকেল তেলে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এ্যাসিড। একটি কটন প্যাড বা তুলার
সাহায্যে নারিকেল তেল সংগ্রহ করে ঠোঁটে ভিজিয়ে রাখুন। রাতে ঘুমানোর সময় করলে
বেশি ভালো হয়। ঘুমানোর আগে ঠোঁটে নারিকেল তেল লাগিয়ে ঘুমিয়ে যাবেন। এটি নিয়মিত
ব্যবহারে ঠোঁট স্বাস্হ্যজ্জ্বল থাকবে।
চিনি এর ব্যবহার-
ত্বকের স্ক্রাবার হিসেবে খুব ভালো কার্যকরী উপাদান হচ্ছে চিনি। এটিকে প্রাকৃতিক
স্ক্রাবারও বলা হয়ে থাকে। আমরা জানি, মরা চামড়া রোধ করতে স্ক্রাবার খুব ভালো
কাজ করে। তবে আজ থেকে জেনে নিন মরা চামড়ার পাশাপাশি ঠোঁট এর কালচে ভাব দূর করতেও
স্ক্রাব বেশ উপযোগী।
আরো পড়ুনঃ চুলকানি দূর করার সহজ উপায় জেনে নিন
আর সেটি হচ্ছে চিনির স্ক্রাব। অতি শীঘ্রই ফলাফল পাওয়ার জন্য পরিমাণ মতো চিনি ও
মাখন দুটি একসাথে মিশ্রিত করে পেস্ট বানাতে হবে। এই পেস্টটি বেশি পরিমাণে বানিয়ে
ফ্রিজেও সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই পেস্ট দিয়ে ঠোঁট
স্ক্রাব করলে ভালো হয়।
মধু এর ব্যবহার-
হারানো ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসে মধু। তাই ঠোঁটের ত্বকেও ব্যবহার করা
যেতে পারে এই মধু। ঘুমানোর আগে ঠোঁটে মধু ম্যাসাজ করে রেখে দিতে পারেন সারারাত।
সকালে উঠে ঠোঁট ধুলেই পার্থক্য চোখে ধরবে। কারণ এই মধু ব্যবহারে ঠোঁট কমল ও মসৃণ
থাকবে পাশাপাশি ঠোঁটের কালচে ভাব একেবারেই দূর হয়ে যাবে।
গ্লিসারিন এর ব্যবহার-
নারিকেল তেলের মতো একই নিয়মে রাতে ঘুমানোর আগে গ্লিসারিন ব্যবহার করুন। এতে ঠোঁট
এর শুষ্কতা ভাব দূর হবে।
গোলাপজল এর ব্যবহার-
গোলাপ ফুল এর নির্যাস দিয়ে তৈরি জল কে গোলাপজল বলা হয়। কিছুটা পরিমাণে তুলো নিয়ে
তুলোর বল তৈরি করতে হবে। এবার সেই তুলোর বলে মিশিয়ে রাতে ঘুমোনোর আগে ঠোঁটে
লাগান। এটি নিয়মিত করলে ঠোঁটে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে। বলতে গেলে এক কথায় ঠোঁটে
বাড়তি যত্ন পাবে।
এ্যালোভেরা এর ব্যবহার-
প্রাকৃতিক গুণাগুণ সম্পন্ন এ্যালোভেরার পেস্ট ঠোঁটের কালো অংশে লাগিয়ে ম্যাসাজ
করুন। কিছুক্ষণ পর ঠোঁট ধুয়ে ফেলুন। এতে ঠোঁটের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
শসা এর ব্যবহার-
প্রথমে শসা ব্লেন্ড করে তা থেকে রস সংগ্রহ করুন। একটি কটন প্যাড বা তুলার
সাহায্যে এই শসার রসটি ঠোঁটে লাগান। কমপক্ষে আধা ঘন্টা পর ঠোঁট ভালো করে ধুয়ে
ফেলুন। শসার রস ঠোঁটের আদ্রতা ধরে রাখে। ঠোঁটকে করে তোলে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
লেবু এর ব্যবহার-
রোদে পোড়া ত্বকেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে লেবু অনেক কার্যকরী। লেবুর সঙ্গে
শুধুমাত্র একটি উপাদান মধু মিশ্রিত করুন। এই মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগিয়ে নিন।
কিছুক্ষণ রেখে নরম কাপড় দিয়ে ঠোঁটটি মুছে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে ঠোঁটের কালচে
ভাব একেবারে দূর হয়ে যাবে।
হলুদ এর ব্যবহার-
সেই আদিম যুগ থেকে ত্বকের যত্নে হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে ঠোঁট এর যত্নে
হলুদের ব্যবহার একটু ভিন্ন রকম। হলুদ এর সঙ্গে দুধ মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে
নিতে হবে। এবার এই প্যাকটি ঠোঁটের কালো স্থানে লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট হয়ে আসলে
এটি ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল ও দাগ হীন হয়ে উঠবে। কারণ হলুদে
রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যা কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
চুন এর ব্যবহার-
একটি পাত্রে চুনের রস তৈরি করবেন। তারপর সেই চুনের রসটি ছেঁকে নিন। চুনের রসটির
সাথে মধু ও গ্লিসারিন মিশ্রিত করে একটি প্যাক তৈরি করুন। সেই প্যাকটি ঠোঁট এর
কালো স্থানে ম্যাসাজ করুন। রাতে ঘুমানোর সময় এটি করুন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন।
দেখবেন ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
পরামর্শমূলক কথা
অনেকেই অনেক রকম ব্র্যান্ডের লিপস্টিক বা খুব গাঢ় শেড এর লিপস্টিক ব্যবহার করে
থাকেন। ঠোঁটকে রাঙ্গাতে গিয়ে বা ঠোঁটে নতুনত্ব আনতে অজান্তেই ঠোঁটের ক্ষতি করে
ফেলেন। মনে রাখবেন, ত্বকের সাথে সাথে ঠোঁটে যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ
মুখের বেশিরভাগ সৌন্দর্য নির্ভর করে চোখ ও ঠোঁটের উপর। তাই ঠোঁটকে রাঙাতে গিয়ে
ঠোঁটের আদ্রতা হারিয়ে ফেলবেন না। তবে সব উপাদান সবার জন্য প্রযোজ্য না। এক একটি
উপাদানে এক এক জনের এলার্জি থেকে থাকে।
তাই জেনে বুঝে সাবধানতা অবলম্বন করে ব্যবহার করবেন। বিশেষত, গাঢ় লিপস্টিক বা
লিপগ্লোস এড়ানোর চেষ্টা করবেন। যাইহোক ওপরে উল্লেখিত প্রতিটি লেখা থেকে আশা করছি
একটি উপকরণ হলেও আপনার কাজে আসবে। পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার
মূল্যবান মতামতটি নিচের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যাবেন।
জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন
সহকারে আপনাদের প্রতিটি কমেন্ট পড়ে থাকে, ধন্যবাদ।