পেটের মেদ কমানোর খাবার তালিকা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি পেটের মেদ কমানোর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে চান? আপনার পেট এর মেদ অতিরিক্ত বেড়ে চলেছে? পেট এর মেদ কমাতে কোন খাবার খাওয়া উচিত আর কোন খাবার খাওয়া অনুচিত সেটি জানেন না? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে পেটের মেদ কমানোর খাবার তালিকা জানানো হয়েছে। 
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন এবং আপনি বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।

পেট এর মেদ কমানোর খাদ্য তালিকা


পেট এর মেদ কমানোর খাদ্য তালিকা গুলো ক্রমানুসারে নিম্নে দেওয়া হলো:
  • পানি
  • শাকসবজি
  • শসা
  • আপেল
  • টক দই
  • ডিম
  • প্রোটিন
  • বাদাম
  • ওটস
  • কিসমিস
  • পিনাট বাটার
  • সবুজ চা
  • আঁশ জাতীয় খাদ্য
  • সামুদ্রিক মাছ

পেট এর মেদ কমাতে খাদ্য তালিকার কার্যপ্রণালী


পানি-

বেশি পরিমাণে পানি পান করলে পেটের মেদ বাড়ে না বরং পেট ভরপুর থাকে। এমনটা করা যায়, খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলে ভালো হয়। এতে পেট পরিষ্কার হয় ও অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে যায়। যার কারনে অতিরিক্ত মেদ হওয়া সম্ভাবনা থাকে না।

শাক সবজি-

পুষ্টি সম্পূর্ণ করতে শাক সবজির কোন প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। তবে সব সময় চেষ্টা করবেন সবুজ শাক সবজি বেশি খাওয়ার। কেননা সবুজ শাক সবজিতে ক্যালরি কম থাকে। এছাড়া খাবার দ্রুত হজম করতে সহায়তা করে। তার কারণ সবুজ শাক সবজিতে হাই ফাইবার বেশি থাকা। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় একটি করে হলেও সবুজ শাক সবজি রাখবেন। এতে পেট এর মেদ কমবে এবং দ্রুত ওজন হ্রাস করবে।

শসা-

শসার মধ্যে পানি রয়েছে ৯২ শতাংশ। শাক সবজির মতো শসাতেও ক্যালোরির পরিমাণ কম রয়েছে। এছাড়াও শসা ঠান্ডা জাতীয় খাদ্য। শসাতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় পেট এর মেদ কমাতে বেশ কার্যকরী। খালি মুখে বা সালাদে শসা খাওয়া যেতে পারে। শসা যেমন ভাবেই খান না কেনো মেদ কমাতে ভালো কাজ করবে।

আপেল-

আপেল খেলে পেট ভরপূর্ণ থাকে। তাই পেট ভরার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে আপেল খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খাবেন।

টক দই-

দই শরীরকে ঠান্ডা রাখে। তাই এটি গরমকাল বা গ্রীষ্মকাল এর জন্য প্রযোজ্য। তবে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে মিষ্টি দুগ্ধজাত দই নয় ফ্যাটলেস টকদই খেতে হবে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ফ্যাটলেস টকদই খুবই দ্রুত ওজন কমিয়ে ফেলে। তাই অতিরিক্ত মেদ কমাতে ভরসা রাখুন টকদই এর উপর।


ডিম-

পেশী শক্ত করতে সাহায্য করে ডিম। ডিম এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা দেহে শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে এবং পেট এর অতিরিক্ত মেদ ক্ষয় করে। পেট এর মেদ দ্রুত কমাতে অবশ্যই প্রতিদিন একটি করে হলেও ডিম খাবেন।

প্রোটিন-

মেদ কমানোর চার্টের তালিকায় অবশ্যই প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখতেই হবে। যেমন: সামুদ্রিক মাছ, মুরগি, সবুজ শাকসবজি, বীজ জাতীয় খাবার, মসুর ডাল ইত্যাদি। এগুলো দেহে শক্তি সঞ্চয় করে এবং মেদ পোড়াতে সাহায্য করে।

বাদাম-

যাতায়াতের সময় বা অবসর সময়ে বাসায় বসে থাকলে ক্ষুধা লাগলে ক্ষুধা নিবারণের জন্য আমরা বাদাম খেয়ে থাকি। বাদাম অনেকেরই পছন্দ তবে প্রতিদিন বাদাম খেলে ক্ষুধার পরিমাণ কমে যায়। তাই ক্ষুধার পরিমাণ কমাতে প্রতিদিন বাদাম খেতে অরুচি লাগলে আপনি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে খেতে পারেন। 


যেমন হতে পারে বিভিন্ন ফলমূলের সাথে বাদাম মিশিয়ে খাওয়া যায়। আবার রোজকার সালাদ এর সাথেও বাদাম মিশ্রিত করতে পারেন। অনেকে ঘি বা বাটারে ভেজে বাদাম খেতে পছন্দ করে। এটিও করে দেখতে পারেন।

ওটস-

ওটস হচ্ছে দানা শস্য খাদ্য। এই খাদ্যটি প্রচুর পরিমাণ ফাইবারে ভরপুর। দীর্ঘ সময় পেট ভরপুর রাখতে ও ক্ষুধা নিবারণ করতে ওটস এর ভূমিকা অনেক বেশি। তাই শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এবং সুরক্ষিত থাকতে নিয়মিত ওটস খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

কিসমিস-

অনেকেই একটি ভুল করে থাকেন তা হলো, কিসমিস মিষ্টি স্বাদযুক্ত খাবার যার জন্য এটিকে দূরে সরিয়ে রাখেন অতিরিক্ত ফ্যাট আসার ভয়ে। আজকের পর থেকে এই ভুল ধারণাটি মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। কিসমিস এ রয়েছে গাবা নামক শক্তিশালী নিউরো ট্রান্সমিটার। 


যা আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। পেট এরদ মেদ কমাতে কিসমিস এর ভূমিকা অসীম। এছাড়াও কিসমিস খাওয়ার সাথে সাথেই শরীরে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে থাকে। যা শ্বাস প্রশ্বাস এর হার কিছুটা হলেও কমিয়ে থাকে। তাই কম করে হলেও ৩-৪ টি কিসমিস প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন।

পিনাট বাটার-

পিনাট বাটারে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কম থাকে। যা অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে। পিনাট বাটার খুব সহজেই ঘরে তৈরি করা যায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পছন্দের পিনাট বাটার রাখতে পারেন।

সবুজ চা-

চা পাতা শুধু শরীরকে সতেজ রাখার কাজে ব্যবহারকারী না ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও কার্যকারী ভূমিকা অর্জন করে। তবে সব প্রকারের চা নয় শুধুমাত্র সবুজ চা। কারণ সবুজ চা এ রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা অতিরিক্ত মেদ দূর করতে সাহায্য করে।

আঁশ জাতীয় খাদ্য-

আঁশ জাতীয় সকল খাদ্যে ভিটামিন-বি এর পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়া শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা রাখার প্রবণতা কমায় আঁশ জাতীয় খাবার। তাই খাদ্য তালিকায় সর্বদা আঁশ জাতীয় খাবার রাখা চেষ্টা করবেন। এটি পেট এর মেদ কমানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সামুদ্রিক মাছ-

সামুদ্রিক মাছ এ রয়েছে ওমেগা ত্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এই অ্যাসিডের কার্যকারিতা হচ্ছে শরীরের প্রয়োজনীয় চর্বি রেখে অতিরিক্ত মেদ বৃদ্ধিকৃত চর্বি হ্রাস করে। সেজন্য সামুদ্রিক মাছ পেট এর মেদ কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

পেট এর মেদ কমানোর ক্ষেত্রে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন

  • আইসক্রিম
  • শরবত
  • চকলেট
  • চিপস
  • কেক
  • পিজ্জা
  • বার্গার
  • ফ্রেঞ্চ ফ্রাই

ঘুম এর সমস্যার কারণে কি পেট এ মেদ হয়?


হ্যাঁ অবশ্যই ঘুম এর সমস্যার কারণে পেট এ মেদ জমে। অনেকেরই কম ঘুমানোর অভ্যাস রয়েছে বা অনেক রাত জেগে সময় কাটায়। দেখবেন তাদের ওজন কোনো কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত বেড়েই চলেছে। তাই পেট এর মেদ সঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোতে হবে। এছাড়াও নিজেকে স্ট্রেস ফ্রি রাখতে হবে। কারণ স্ট্রেসও ওজন বাড়িয়ে থাকে।

পরামর্শমূলক কথা


সুন্দর ছিমছাম, ঝরঝরে ও মেদহীন শরীর কে না চায়। পেট এর অতিরিক্ত মেদ অতি বিরক্তকর এবং দেহের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় উপরিউক্ত খাবার গুলো অবশ্যই রাখার চেষ্টা করবেন। শুধুমাত্র খাদ্য তালিকা অনুসরণ করে চললেই পেট এর মেদ কমে যাবে না। এর পাশাপাশি হাঁটাচলা, কিছু পরিশ্রম অথবা ব্যায়াম করতে হবে। এতে করে পেট এর মেদ দ্রুত কমে আসবে। পরিশেষে আমার প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলব যে, পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামত নিচে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যাবেন। 

জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। তাহলে দেরি না করে আজ থেকেই আনুন নিজের জীবনে নতুনত্ব। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন