ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষুধ--বাচ্চাদের খাবারে অনিহা দূর করণীয়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ওষুধ কোন গুলো জানতে চান? বাচ্চাদের খাবারে অনিহা দূর করতে চান? আপনার বাচ্চার খাবারের প্রচন্ড অরুচি এবং আপনার বাচ্চা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ এর নাম দেওয়া রয়েছে এবং বাচ্চাদের খাবারে অনিহা দূর করণীয় কিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন এবং আপনি বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।

অভিভাবকদের অভিযোগ


বেশিরভাগ অভিভাবকদের একই অভিযোগ যে, শিশুর খাবারের প্রতি অনীহা বা শিশু খেতে চায় না। বেশিরভাগ শিশুরাই পুষ্টিকর খাবার একদমই খেতে চায় না। আর শিশু যদি পুষ্টিকর খাবার খেতে না চায় খাবারের প্রতি অরুচি সৃষ্টি হয় তাহলে প্রত্যেক বাবা-মায়ের চিন্তার কারণ হবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে অধিকাংশ শিশুরাই অপুষ্টি জনিত রোগে ভুগছে। আর এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে খাবার না খাওয়া। 


আবার ঋতুর পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ ঠান্ডা হঠাৎ গরম লেগেই থাকে। অভিভাবকের অসচেতনে বা আবহাওয়ার পরিবর্তনে বাচ্চাদের সর্দি, কাশি, জ্বর হয়ে থাকে। একেই তো বাচ্চারা খেতে চায় না আবার এই অসুস্থতার কারণে শরীর একদমই পুষ্টিহীন হয়ে পড়ে। নতুন প্রজন্মে আমাদের সন্তানদের এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে শিশুরা এই বিশাল সমগ্র পৃথিবীর সাথে লড়াই করে বাঁচতে পারে।

বাচ্চাদের খাবারে অনীহা


অনেক সময় বাচ্চাদের খাবারে অনীহা চলে আসে তার প্রধানতম কারণ হচ্ছে, একই খাবার বার বার খাওয়ানো। এই নিয়মটি ছোট শিশুদের বেলায় বেশি প্রয়োগ করা হয়। যেমন: দুধ, সুজি, সাবুদানা, সেরেলাক ইত্যাদি। আবার আরেকটি কারণ হতে পারে যেমন: খাবার সুস্বাদু না হওয়া। শিশুরা মজাদার খাবার বেশি পছন্দ করে। 


খাবার যদি মজাদার না হয় তবে বদহজম হয়ে থাকে। এছাড়াও গ্যাস এর কারণেও বাচ্চাদের ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। এ সকল সমস্যা গুলো আপনার বাচ্চার মধ্যে যদি দেখা দেয় তবে তৎক্ষণাৎ ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন এবং ডাক্তারের সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চার খাবারে অনীহা দূর করণীয় ঔষধ সেবন করান।

বাচ্চাদের খাবারে রুচি হওয়ার ঔষধ


  • Zink-b Syrup
  • Mixavit Syrup
  • Megestrol Syrup
  • Wellkid Syrup
  • Bicozin Syrup
  • Dorakid Syrup
  • Filwel kids Syrup
  • Bextram kids Syrup
যদিও বা উপরিউক্ত ঔষধ গুলি বাচ্চাদের খাবারের রুচি আসে তবে সবচেয়ে ভালো হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ানো। যেহেতু বিষয়টি ছোট শিশুদের তাই এটি অত্যন্ত সেনসিটিভ ব্যাপার। বিস্তারিত না জেনে কোনো ঔষধ বাচ্চাদের সেবন করাবেন না।

অভিভাবকদের জন্য কিছু টিপস


  • বাচ্চাদের খাদ্যে আকর্ষণীয়তা বজায় রাখবেন।
  • খাদ্য প্রণালী সম্পর্কে সচেতন থাকবেন।
  • সময়মতো খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
  • বাচ্চাকে জোর করে খাওয়াবেন না।
  • বাচ্চার মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে তাকে প্রয়োজনীয় সময় দিন।
  • বাচ্চার সামনে পিতা-মাতা ভালো আচরণ করবেন। এতে বাচ্চা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বোধ করবে।
  • আপনার অপছন্দের খাবারটি বাচ্চার সামনে তুলে ধরবেন না। এতে তারাও সুযোগ নেবে।
  • শিশুর পছন্দের খাবারটি খাদ্য তালিকায় বেশি রাখার চেষ্টা করবেন।
  • অভিভাবকরা সবসময় স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে বাচ্চাদেরও সে অভ্যাসটি করে উঠবে।
  • মাঝে মাঝে খাবারের প্রতি শিশুদের উৎসাহিত করার জন্য শিশু পার্ক বা অন্য কোথাও যাওয়ার কথা তাদের সামনে তুলে ধরবেন।
  • পরিবারের সকলে ও শিশুদের নিয়ে একসাথে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করবেন।
  • খাবার খাওয়ার সময় শিশুদের সামনে শিক্ষনীয় বিষয় সমূহে আলোচনা করবেন।
  • শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াতে প্রশংসা করবেন এবং পুরস্কার দিবেন।

বাচ্চার ক্ষুধা বৃদ্ধির উপায় সমূহ


বাচ্চার ক্ষুধা বৃদ্ধিতে চিনা বাদাম-

খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে চিনা বাদাম ক্ষুধা বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম। চিনা বাদাম আপনার সন্তানের ক্ষুধা বৃদ্ধির জন্য অনেক উপকারী হবে।

বড়ই ফল-

বড়ই ফল ক্ষুধা বৃদ্ধির জন্য বেশ পরিচিত। এই পুষ্টি সম্পূর্ণ ফলটি অনেক শিশুরাই পছন্দ করে এবং অসাধারণ স্বাদযুক্ত এই ফল শিশুদের ক্ষুধা বৃদ্ধি করে।

গাজর-

আমরা সকলেই জানি গাজরের উপকারিতা অনেক বেশি। তবে এটি হয়তো অনেকেই জানেন না যে ক্ষুধা বৃদ্ধিতেও গাজরের ভূমিকা রয়েছে। আপনার শিশুকে খাবার দেওয়ার ঠিক আধাঘন্টা আগে একটি করে গাজর খেতে দিন। এতে শিশুটির ক্ষুধা বৃদ্ধি পাবে।

লেবু-

লেবু অনেক দ্রুত ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। তাই শিশুকে লেবুর রস তৈরি করে লেবু পানি খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। এছাড়াও খাবারের মধ্যে লেবুর রস ছিটিয়ে খাবারটি আরো সুস্বাদু করে তুলতে পারেন। এতে বাচ্চাটির খাবারের রুচি আসবে।

কুমড়ার বীজ-

অনেকেই কুমড়ার বীজ ফেলে দেয়। তবে এটি ফেলে না দিয়ে অথবা অপচয় না করে সেটি শুকিয়ে কড়াই বা সসপ্যানে ভেজে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। কুমড়ার বীজ অতি সুস্বাদু একটি খাবার। এটি শুধু বাচ্চাদের নয় বড়দেরও খুব পছন্দনীয়। তাই পরিবারের সকলে এটি খেতে পারেন কোনো সমস্যা নেই। কুমড়ার বীজ খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা তৈরি করতে সাহায্য করে।

বাচ্চাদের খাদ্যে আকর্ষণীয়তা আনতে কিছু টিপস


  • অনেক বাচ্চারা মাছ খেতে চায় না। এক্ষেত্রে মাছের টিকিয়া বা চপ তৈরি করে দিতে পারেন। কিছুটা আকর্ষণীয় হবে।
  • ছোট বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই আলু রাখবেন। কারণ আলুতে কার্বোহাইড্রেট আছে। যদি আপনার বাচ্চা প্রতিদিন আলু খেতে না চায় তবে মাঝে মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারেন। যেমন ধরুন আলুর পরোটা।
  • বাচ্চারাও কিন্তু খাবারের স্বাদ বোঝে। তাই সকল মসলা দিয়েই খাবার তৈরি করবেন। শুধুমাত্র মরিচের পরিমাণটা কম দিবেন এবং কাঁচা মরিচ ব্যবহার করবেন।
  • বাচ্চারা যখন একটু বড় হয় তখন একদমই ডিম খেতে চায় না। সেক্ষেত্রে এগ রোল বানিয়ে দিতে পারেন।
  • মাঝে মাঝে নাস্তার মধ্যে চিকেন স্যান্ডউইচ বানিয়ে খাওয়াবেন। এতে বাচ্চার রুচি ফিরবে।
  • অনেক সময় বাচ্চারা ভাত রুটি খেতে খেতে একঘেয়ে হয়ে যায়। এমনটা যদি হয় তবে, মজাদার খিচুড়ি রান্না করে দিতে পারেন বা ফ্রাইড রাইসও তৈরি করে দিতে পারেন।
  • নাস্তায় আকর্ষণীয়তা আনতে মাঝে মাঝে লুচি বানিয়ে দিতে পারেন।
  • বাচ্চাদের বিভিন্ন ফলের সালাদ বানিয়ে খাওয়াবেন। এতে বাচ্চারা সেই সালাদ ঘুরে ঘুরে খাবে এবং মুখ টেস্ট ফুল থাকবে।
  • গ্রীষ্মকালীন সময় বাচ্চারা তরল খাবার পছন্দ করে। এজন্য বাচ্চাদের আইসক্রিম বা মিল্কশেক বানিয়ে খাওয়ান। এতে বাচ্চারা খুশি হয়ে যাবে এবং খাবারের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করবে। শুধু তাই নয় বাচ্চাদের শরীরে প্রয়োজনীয় জল এর অভাব পূরণ করবে।

পরামর্শ মূলক কথা


বাচ্চাদের খাবারের আকর্ষণীয়তা আনতে ও সুস্বাদু খাবার খাওয়াতে যেয়ে হোটেলে তৈরি বা দোকানের কেনা খাবার খাওয়াবেন না। এতে বাচ্চার হিটে বিপরীত হয়ে যাবে অর্থাৎ ক্ষতি হবে। সর্বদা বাসায় বানানো খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। এছাড়াও বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি বা খেলাধুলার মধ্যে রাখার চেষ্টা করবেন। যাতে হজম ভালো ভাবে হয় এবং খিদে পায়। 


যাই হোক, আশা করছি ওপরের লেখা গুলো থেকে একটি লাইন হলেও আপনার সোনামনির কাজে আসবে। পরিশেষে আমার প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলতে চাই যে, পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার যদি একটুও ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানিয়ে যাবেন।

জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন