আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান?
আপনার জন্য আমলকি খাওয়া সঠিক হবে কিনা তা নিয়ে আপনি চিন্তিত? যদি এমনটি হয়
তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোষ্টে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এছাড়া আমলকি সম্পর্কে আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
দেওয়া রয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন এবং আপনি বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।
আমলকি কিভাবে খেতে হয়
আমলকি বেশ টক জাতীয় ফল এবং খুব ছোট জাতের ফল। এই ফলটি খেতে তেতো লাগে এবং কষটে
ভাব রয়েছে। তাই বেশির ভাগ মানুষই এই ফলটি কাঁচা খেতে পারে না। তবে আমলকি ফলটি
খাওয়ার পর একটু মিষ্টি ভাব আসে। যেহেতু ফলটির অনেক উপকারিতা রয়েছে সেহেতু টক
ভাব দূর করতে ছোট ছোট আকারে কেটে নেওয়া যায়। এবার তাতে নুন ও লঙ্কা মিশিয়ে
খাওয়া যেতে পারে। আবার অনেকের এই পদ্ধতিটি পছন্দনীয় না হলেও আমলকির চাটনি
বানিয়ে খাই। তবে আমলকি চিবিয়ে খাওয়া ভালো। এতে বেশি উপকার মেলে।
আমলকি খাওয়ার নিয়ম
আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ এ ভিটামিন-সি রয়েছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি
পেটে দুই একটা আমলকি চিবিয়ে খেয়ে নিবেন। এটি শরীরের মেদ ঝরানোর কাজ করে এছাড়াও
ত্বক ভালো রাখে। তবে দুই একটির চেয়ে বেশি আমলকি খাবেন না। কারণ আমলকিতে কোষ্ঠ
কাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমলকির গুনাগুন ও উপকারিতা এতই বেশি যে লিখে শেষ করা যাবে না। তবুও স্বল্প সংখ্যক
আমলকির কিছু উপকারিতা নিম্ন বর্ণিত হলো:
- আমলকি শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
- চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়তে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- লিভার সুস্থ রাখে।
- কিডনি ভালো রাখে।
- পেশী মজবুত করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- শরীরে অতিরিক্ত মেদ কমায়।
- খাবারের রুচি বৃদ্ধি করে।
- পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম সঠিক রাখে।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
- এ্যাজমা ও শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা নিরাময় করে।
- ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ ছোপ দূর করে ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
- শরীরে ওজনের সঠিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে।
- চুল পড়া রোধ করে এবং চুল মজবুত ও স্বাস্থ্যেজ্জ্বল করে।
খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেই খালি পেটে লেবু পানি খেয়ে থাকি। তবে খালি পেটে আমলকি খাওয়ার যে
উপকারিতা রয়েছে সেটি হয়তো অনেকেই জানে না। যদিও বা লেবুতেও রয়েছে ভিটামিন-সি
তবে আমলকি তার থেকেও বেশি কার্যকরী। তাহলে চলুন জেনে নেই খালি পেটে আমলকি খাওয়ার
নিয়ম বা পদ্ধতি।
আরো পড়ুনঃ টাক মাথায় চুল গজানোর উপায় জানুন
প্রথমে আমলকি কেটে ছোট ছোট টুকরো করে নিবেন। তারপর সকালে খাওয়ার জন্য কুসুম গরম
পানি নিয়ে সেই ছোট টুকরো গুলো পানির মধ্যে মিশিয়ে নিন। এবার সেই পানিটি খালি
পেটে খেয়ে নিন। দুই একটা আমলকির টুকরো যদি থেকে যায় তবে সেটি চিবিয়ে খেয়ে
নিতে পারেন।
চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা
চুলের যত্নে একটি উপাদান এর গুরুত্ব অনেক বেশি। আর তা হলো আমলকি। তাই যুগ যুগ ধরে
আমলকি চুলের যত্নে প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আমলকিতে এক অজানা
অসাধারণ উপাদান রয়েছে যা চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
চলুন তাহলে নিচে সেই অসাধারণ গুন ও গুণের ব্যবহার গুলো জেনে নেই।
আমলকির গুনাগুন
চুল মজবুত করে- আমলকি এক অনন্যা উপকারী টনিক হিসেবে কাজ করে চুল এর জন্য।
চুলের ফলিকল শক্ত ও মজবুত করে তোলে ও চুলের শিকড় শক্তিশালী করে তোলে। যার জন্য
চুল ঝরে পড়ে না বরং দ্রুত বৃদ্ধি হয়। এছাড়াও আমলকিতে রয়েছে, খনিজ, ভিটামিন, ও
ফাইটো-নিউট্রিয়েন্ট। যা চুলের ফলিকল এর মৃত কোষ গুলোকে নতুন চুল এর কোষ দিয়ে
প্রতিস্থাপন করতে সাহায্য করে।
চুলে কন্ডিশনার হিসেবে ভূমিকা রাখে- আমলকি ব্যবহারে চুল পুষ্টি সম্পন্ন,
মজবুত ও চকচকে হয়ে থাকে এবং অতিরিক্ত চুলে ভলিউম যোগ করে। এছাড়া আপনি যদি
তৈলাক্ত চুলের অধিকারী হয়ে থাকেন তবে আমলকি পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। আমলকি
পাউডারটি আপনার মাথার ত্বক এর অতিরিক্ত তেলকে ভিজিয়ে রাখবে এবং কন্ডিশনিং করে
তুলবে।
মাথার ত্বক পরিষ্কার করে- মাথার ত্বক পরিষ্কার করতে আমলকি রস এর ভূমিকা
অনেক বেশি। আগেই বলেছি আমলকিতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা আপনার বাইরে থাকা
ধুলোবালি ও ময়লা হতে চুলের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করবে। মাথার ত্বক পরিষ্কার করে
তুলবে এবং ত্বকে পুষ্টি যোগাবে।
খুশকি দূর করে- মাথার ত্বক যখন শুষ্ক হয়ে থাকে তখন খুশকি দেখা দেয়।
যেহেতু আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন সি সেহেতু চুল এর শুষ্কতা দূর করতে ও খুশকি জমাট
বাঁধা রোধ করতে আমলকি কার্যকরী। কারণ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ উপাদান শুষ্কতা দূর করে।
এছাড়াও আমলকিতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটোরিয়াল। যা মাথার
ত্বকে খুশকি ও চুলকানি একেবারে বন্ধ করে দেয়।
আমলকি খাওয়ার অপকারিতা
আমলকি খাওয়ার বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে যেমন ঠিক তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। কোন
কিছুই অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবে না। মনে রাখবেন, সব উপাদান সবার শরীর এর
জন্য প্রযোজ্য না। কোনো উপাদানে কারো উপকার মিলবে আবার কারো হিটে বিপরীত হয়ে
ক্ষতি হতে পারে।
তাহলে চলুন নিচে জেনে নেই আমলকি খাওয়ার অপকারিতা সমূহ:
- স্বাভাবিক ভাবে আমলকিতে অনেকের এলার্জি থাকতেই পারে। তবে তাদের জন্য আমলকি খাওয়ার ক্ষতিকর হবে।
- বড় ধরনের কোনো অপারেশন বা সার্জারির পর আমলকি না খাওয়াই ভালো। কারন সে সময় আমলকিতে রক্ত পাতলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- যারা শুষ্ক ত্বকের অধিকারী তারা আমরা কি খাবেন তবে অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া ঠিক না। কারণ অতিরিক্ত খেলে হিটে বিপরীত হয়ে মাথার ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যাবে।
- আমলকি ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের জন্য ভালো। তবে আমলকিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম যার জন্য অতিরিক্ত খাওয়াই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অনেকেই আমলকি পছন্দ করে থাকে। তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আমলকি খাওয়ার কারণে, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাব এরূপ সমস্যায় ভুগতে হবে।
- স্বাভাবিক নিয়মে একটি থেকে দুইটির উপর আমলকি খাবেন না। নয়তো কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগতে হবে।
- চিকিৎসকরা সর্বোপরি গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
- অনেক সময় আমলকি খেলে শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যখনই এরূপ সমস্যা দেখবেন তৎক্ষণাৎ আমলকি খাওয়া পরিহার করবেন।
পরামর্শ মূলক কথা
বিজ্ঞানীদের মতে, হাজারো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই আমলকি ফল গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দূর
করে থাকে এবং হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষকরা আরো জানিয়েছেন যে,
পুষ্টিগুণে ভরপুর আমলকি ফলটি ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কার্যকরী।
যাই হোক, আশা করছি এই পোস্টটি পড়ে আপনার এক লাইন হলেও কোনো না কোনো কাজে আসবে।
পরিশেষে আমার প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলব যে, পুরো পোস্টটি পড়ে
আপনার যদি একটুও ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামতটি নিচে কমেন্ট
বক্সে জানিয়ে যাবেন।
জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। সর্বশেষ
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ।