আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? আপেল
খাওয়া ক্ষতিকর কিনা তা নিয়ে আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে? তাই হয় তাহলে এই পোস্টে
আপনার জন্য। এই পোস্টে আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
এছাড়া আপেল সম্পর্কে আরো বিভিন্ন রকম অজানা তথ্য দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি অতি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
পোস্ট সূচিপত্র:আপনার মনে জমে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর রয়েছে এই পোস্টে। আশা করছি পুরো
পোস্টটি পড়ে এক লাইন হলেও আপনার কোনো না কোনো কাজে আসবে বা আপনার সমস্যার সমাধান
করবে, ধন্যবাদ।
আপেল পরিচিতি
বহুল ব্যবহৃত ফল গুলির মধ্যে আপেল একটি জনপ্রিয় ফল। যা যুগ যুগ ধরে সুস্বাদু
স্বাদের তালিকায় যুক্ত হয়ে রয়েছে। সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতায় বিশেষ অবদান
রাখে এই আপেল ফল। আপেলে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, খনিজ, পটাশিয়াম ও
ডায়েটারি ফাইবার । আপেল এ থাকা এ সকল পুষ্টি সমৃদ্ধ উৎস গুলো সঠিক প্রক্রিয়ায়
হজমের কার্যপ্রণালী বজায় রাখে এবং স্বাস্থ্যকর ইমিউন সিস্টেম ধরে রাখে। এছাড়াও
কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্যকে সমর্থন করতে সাহায্য করে। তবে আপেল খাওয়ার সুবিধা
যেমন রয়েছে তেমন অসুবিধাও রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
চলুন তাহলে নিচে জেনে নেই আপেল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা।
আপেল এর উপকারিতা
- হার্ট ভালো রাখে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- শরীরে ওজন সঠিক রাখে।
- ত্বক এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
উপকারিতার বর্ণনা
হার্ট ভালো রাখে: আপেল এ রয়েছে ফাইবার উপাদান। যা পেকটিন নামে পরিচিত দ্রবণীয়
ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল এর মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। আপেল
নিয়মিত খেলে বিশেষ কিছু রোগ এর ঝুঁকি কমায়। যেমন:
- স্ট্রোক।
- হৃদরোগ।
- উচ্চ রক্তচাপ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নিয়মিত আপেল ফল
খেতে হবে নতুবা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারন আপেল এ প্রচুর পরিমাণে
পটাশিয়াম বিদ্যমান রয়েছে। যা দেহে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও দেহে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আপেল ফল এ
থাকা পটাশিয়াম।
শরীরে ওজন সঠিক রাখে: যেহেতু আপেল ফলে ক্যালরি এবং চর্বির পরিমাণ কম থাকে
সেহেতু
অতিরিক্ত ওজন
এর অধিকারীরা ডায়েট চার্টের তালিকায় এই ফলটি রাখতে পারেন। কারণ এই ফলটি
ওজন কমাতে
এবং ও সঠিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটিকে চমৎকার স্ন্যাক অপশন হিসেবেও
রাখতে পারেন। আপেল ফল অপ্রয়োজনীয় তৃষ্ণা মেটায় । এছাড়াও অতিরিক্ত খাওয়া দমন
করে থাকে এর ফল।
ত্বক এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে: আপেল এ থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বক এর
সজীবতা ধরে রাখে। এছাড়াও আমরা জানি ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন-সি। আর
এই ভিটামিন-সি প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে আপেল ফল এ। ভিটামিন-সি থাকায় আপেল
ফল এ ত্বকে যা যা উপকার হয়:
- ব্রণ দূর করে।
- মেছতার দাগ কমায়।
- ত্বক এর কালো দাগ দূর করে।
- ত্বক নরম রাখে।
- ত্বক এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও ত্বকের জেল্লা বাড়াতে আপেল এর পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। পেস্ট তৈরির
নিয়ম: আপেল ব্লেন্ড করে তাতে খানিকটা মধু ও দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে পারেন।
এটিকে ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ফেস মাস্কটি ব্যবহার করলে ত্বক
এর জেল্লা অধিক হারে বৃদ্ধি পাবে।
আপেল এর অপকারিতা
- এলার্জি জনিত সমস্যা।
- হজম এর সমস্যা।
- অতিরিক্ত কীটনাশক।
- দাঁতে ক্ষয়।
অপকারিতার বর্ণনা
এলার্জি জনিত সমস্যা: কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে আপেল খাওয়াতে
এলার্জি জনিত সমস্যা
দেখা দিতে পারে অর্থাৎ এলার্জি প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। আপেলে এনার্জির লক্ষণ
গুলো হলো:
- ত্বকে চুলকানি।
- ফোলা ভাব।
- লালচে ভাব।
- শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা।
যদি আপনার আপেল সেবনে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা থেকে থাকে বা ফল খেলে এলার্জির
প্রতিক্রিয়া ঘটে এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে চলা উচিত অথবা এরূপ ফল থেকে বিরত
থাকা উচিত। নতুবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
হজম এর সমস্যা: যেহেতু আপেল এ ফাইবার উপাদান রয়েছে সেহেতু কিছু লোকের
জন্য হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে বা হজমে অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এই সমস্যা
লক্ষণ গুলি হলো:
গ্যাস এ পেট ফোলা ভাব।
- অস্বস্তি ভাব।
- ডায়রিয়া।
- পেট ব্যথা।
বিশেষ করে বেশি পরিমাণে আপেল খেলে এই সমস্যা গুলো দেখা দেয়। এক্ষেত্রে আপনি
নিজেকে সুস্থ রাখতে আপেল এর পরিবর্তে অন্য ফল বেছে নিতে পারেন।
অতিরিক্ত কীটনাশক: আপেল উৎপাদন এর সময় অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
যার ফলে এই ফলটি সেবনে মানবদেহে ক্ষতিসাধন করে।
দাঁতে ক্ষয়: আপেল ফল পরিমিত পরিমাণে খেলে সমস্যার সম্মুখীন হবে না। তবে
অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপেল এর মধ্যে থাকা এসিড এর জন্য দাঁত এর ক্ষয় হতে পারে।
আপেল এর পরিবর্তে কোন ফল খাওয়া যায়?
আপেল ফল এর বিপরীতে আপনি বেছে নিতে পারেন পেয়ারা ফল। তার কারণ হচ্ছে, আপেল এ
থাকা বিশেষ পুষ্টিগুণ গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে পেয়ারার মধ্যে। গবেষকরা
জানিয়েছেন যে, একটি আপেলের পরিবর্তে একটি পাকা পেয়ারার মধ্যে সমপরিমাণ
পুষ্টিগুণ পাওয়া গেছে। তাই আপনি অনায়াসে পেয়ারা ফলটি আপেল এর পরিবর্তে খেতে
পারেন।
গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়া ভালো না খারাপ?
গর্ভাবস্থায় অবশ্যই আপেল খাওয়া ভালো। গর্ভকালীন সময়ে আপেল খেলে মা ও শিশু
দুজনেরই উপকার মিলে।
চলুন তাহলে নিচে জেনে নিই গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার উপকারিতা সমূহ:
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাব দূর করে।
- হৃদপিন্ডের জটিলতা কমায়।
- মা ও শিশু দুজনের হারের গঠন মজবুত হয়।
- শিশুর ওজন বৃদ্ধি হয়।
- শিশুর স্মৃতিশক্তি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- শিশুর মস্তিষ্কে বিকাশ ঘটে।
- গর্ভাবস্থায় নিয়মিত আপেল খাওয়ায় শিশুর এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশে কমে যায়।
- অ্যাজমা হওয়া সম্ভাবনাও কমে যায়।
- আপেল এ রয়েছে ফলিক অ্যাসিড। যার কারণে শিশুর জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
আপেল লাল নাকি সবুজ কোনটা খাবেন?
আপেল ফল নানা রঙের নানা আকারের রয়েছে। তবে বহুল প্রচলিত তিনটি রং তা হলো: লাল,
সবুজ হলুদ। বেশিরভাগ সময় লাল ও সবুজ আপেলের দেখা মেলে। আর তা নিয়ে অনেকের মনে
অনেক জল্পনা কল্পনা রয়েছে। যেমন: কোন রঙের আপেল বেশি স্বাস্থ্যকর, কোন রঙের
আপেলটি খেলে বেশি উপকার মিলবে।
চলুন আজ জেনে নেই কোন রঙের আপেলটি বেশি উপকারী।
লাল আপেল: লাল আপেল এ মিষ্টির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। লাল আপেল এ আঁশ কম
তবে কার্বোহাইড্রেট বেশি। সবুজ আপেল এর তুলনায় লাল আপেল এ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
এর পরিমাণ বেশি। যা আমাদের শরীরে কোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
জাতীয় খাবার দেহ থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। এছাড়াও শরীরের ত্বককে রাখে
তারুণ্যজ্জল। তাই ত্বক ভালো রাখার ক্ষেত্রে ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি পেতে সবুজ
আপেল এর পরিবর্তে লাল আপেলটি বেছে নিতে পারেন।
সবুজ আপেল: লাল আপেল এর তুলনায় সবুজ আপেল এ কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরির
পরিমাণ কম। তবে সবুজ আপেল এ ফাইবার বা আঁশ বেশি। এক্ষেত্রে যারা কম ক্যালরিযুক্ত
আপেল খেতে চান তাদের জন্য সবুজ আপেলটি উত্তম। এছাড়াও লাল আপেল এর তুলনায় সবুজ
আপেল এ দ্বিগুণ হারে ভিটামিন-এ রয়েছে। যা চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলব যে, লাল আপেল ও সবুজ আপেল এর পুষ্টিগুণ খানিকটা এদিক-ওদিক হলেও
প্রায় কাছাকাছি। শুধুমাত্র ভিটামিন-এ ছাড়া অন্যান্য পার্থক্য গুলো খুবই
সামান্য।
পরামর্শ মূলক কথা
প্রবাদে রয়েছে, প্রতিদিন একটি করে আপেল সেবন নাকি ডাক্তার থেকে দূরে রাখে। অর্থাৎ
রোগ বালাই কম হয় এটি বোঝায় আর কি। তাই যদি আপনার ফল কেনার সামর্থ্য থাকে তাহলে
নিয়মিত আপেল ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই যে কোনো ফল খাওয়ার আগে
ভালোমতো ধুয়ে খাবেন। সবশেষে আমার প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলব যে, পুরো পোস্টটি
পড়ে আপনার যদি একটুও ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামতটি নিচে
কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যাবেন। আপনার অন্যান্য বিষয়ে কিছু জানার থাকলে বা প্রশ্ন
থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখবেন।
জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। সুস্থ
থাকবেন ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।