টবে ধনিয়া পাতা চাষ করার পদ্ধতি জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি টবে ধনিয়া পাতা চাষ করার পদ্ধতি জানতে চান? ধনিয়া পাতা
আপনার খুব পছন্দের তবে সেটি নিজের বাসায় চাষ করে খেতে চান? যদি এমনটি হয় তাহলে
আজকের এই পোষ্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে টবে ধনিয়া পাতা চাষ করার পদ্ধতি
জানানো হয়েছে। ধনিয়া পাতা সম্পর্কে আরো বিভিন্ন রকম অজানা তথ্য দেওয়া রয়েছে এ
পোস্টে।
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা
করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন। পোস্টে লেখা গুলোর মধ্যে এক লাইন হলেও
আপনার কাজে আসবে বা আপনার সমস্যার সমাধান পাবেন। কারণ অনেকের মনে জমে থাকা জানা
অজানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া রয়েছে এই পোস্টে, ধন্যবাদ।
ধনিয়া পাতার ভূমিকা
ধনিয়া পাতায় রয়েছে, বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আইরন, ক্যারোটিন,
ক্যালসিয়াম। ধনিয়া হচ্ছে, বিরুৎ জাতীয় স্বল্প কালীন চাষযোগ্য একটি ফসল। এছাড়াও
ধনিয়া একটি সুগন্ধি মসলা জাতীয় ফসল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ধনিয়া পাতার ইংরেজি
নাম হচ্ছে, "Parsley" যদিও বা বাজারে ধনিয়া পাতা সবসময় পাওয়া যায় তবে শীতের
আমেজ এ নিজের হাতে চাষ করা ধনিয়া পাতার স্বাদই যেন অন্যরকম।
যুগ যুগ ধরেই তরকারি, চাটনি, স্যালাড, চটপটি ইত্যাদি সুস্বাদু করতে ধনিয়া পাতার
ব্যবহার হয়ে আসছে। গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ধনিয়া পাতায় রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ঔষধি
গুণাগুণ। ছোটখাটো কিছু টোটকা জানলেই খুব সহজে চাষ করতে পারবেন ধনিয়া পাতা। চলুন
তাহলে নিচে জেনে নেই ধনিয়া পাতা চাষ করার পদ্ধতি।
টবে ধনিয়া পাতা চাষ করার পদ্ধতি
ধনিয়া পাতা প্রায় সারা বছরই জন্মায়। সাধারণত, ধনিয়া বীজ দিয়ে চাষাবাদ করা হয়।
যেকোনো বীজ এর দোকানে গিয়ে খুবই স্বল্প টাকায় ধনিয়া বীজ ক্রয় করতে পারবেন। টবে
ধনিয়া চাষ এর উপযুক্ত সময় হচ্ছে,
"( ইংরেজিতে ) সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর"
"( বাংলায় ) আশ্বিন থেকে পৌষ"
মাটির ক্ষেত্রে, সব মাটিতেই ধনিয়া পাতা চাষ করা সম্ভব। তবে ধনিয়া চাষ এর জন্য
বিশেষ উপযোগী মাটি হচ্ছে, এঁটেল দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি। ধনিয়া গাছ এর জড়
জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সেক্ষেত্রে টবে ধনিয়া চাষ করতে হলে পানি বের
হওয়ার সুবিধা থাকতে হবে। আর এই টব গুলো অল্প রোদে অর্থাৎ বেলকুনী বা বারান্দায়
রাখা যায়।
কেউ চাইলে বড় পাত্রে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য গাছ এর সাথেও ধনিয়া চাষ করতে
পারেন। প্রথমে টব এর মাটি গুলো কড়া রোদে শুকিয়ে একদম ঝুরঝুর করে নিতে হবে। তারপর
ধনিয়া বীজ বপন করতে হবে। চলুন নিচে জেনে নিই ধনিয়া বীজ বপনের সমস্ত নিয়মাবলি:
ধনিয়া বীজ বপন এর নিয়মাবলি
টবে ধনিয়া পাতা চাষ করতে হলে বীজটাকে আগে তৈরি করে নিতে হবে। বাজারে যে শুকনো
ধনের বীজ পাওয়া যায় সেটি ক্রয় করে বাসায় আনার পর রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। বীজ
রোদে শুকানোর কারণ হচ্ছে, বীজ এর অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়বে এবং বীজ এর রোগ বালাই
দমন হবে। বীজ গুলো শুকিয়ে এলে হাত এর সাহায্যে হালকা চাপ দিয়ে দুই ভাগ করে নিতে
হবে। এরপর সেই বীজ গুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
আরো পড়ুনঃ পেটের মেদ কমানোর খাবার তালিকা জেনে নিন
বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখার কারণ হচ্ছে চারা দ্রুত গজাবে। প্রায় ২৪ ঘন্টার বেশি
ভেজা কাপড়ের মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। টবে লাগানোর ক্ষেত্রে, টবটি হবে প্রায়
চওড়া মুখের অথবা প্লাস্টিক এর গামলা হলেও চলবে। টব এর আকৃতি এমন হবে যাতে একশটির
বেশি চাষ করা সম্ভব হয়। টব এর মাটিতে বীজ গুলো প্রায় এক থেকে দেড় ইঞ্চি ভিতরে
বপন করতে হবে। এরপর ভালো করে সেচ দিতে হবে।
টবে ধনিয়া পাতার পরিচর্যা
ধনিয়া গাছ যেহেতু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারেনা সেহেতু মাটি শুকনো রাখতে হবে এবং
দু একদিন পর পর পানি দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে গাছ এর গোড়ায় যেন পানি না জমে।
আবার ধনিয়া গাছে পাখি বসে। খেয়াল রাখতে হবে ধনিয়া পাতা যেনো পাখি খেয়ে না
ফেলে। স্বাভাবিক নিয়মে চারা গজাতে এক থেকে দশ দিন লাগে। আর ধনিয়া গাছ সম্পূর্ণ
রূপে বড় হতে এক থেকে দেড় মাস লাগে।
ধনিয়া চাষ করতে বাড়তি সারের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে মনে রাখবেন ধনিয়া গাছ যত
বেশি বড় হবে স্বাদ ততো কমে যাবে। তাই ধনিয়া গাছ স্বাভাবিক বা মাঝারি আকারে বড়
হলেই পাতা তুলে নিবেন। ধনিয়া পাতা গাছ এর সাথে অনেক পরগাছা ও আগাছা জন্ম নিয়ে
থাকে। কিছুদিন পর পর আগাছা গুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ধনিয়া পাতার গুনাগুন
ধনিয়া পাতা ভিটামিন এর চমৎকার উৎস হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি
সমৃদ্ধ ধনিয়া পাতার গুনাগুন অনেক বেশি।
আরো পড়ুনঃ টাক মাথায় চুল গজানোর উপায় জানুন
চলুন তাহলে নিচে জেনে নেই ধনিয়া পাতার গুনাগুন:
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- হৃদ রোগ এর ঝুঁকি কমায়।
- শরীর ঠান্ডা রাখে।
- শরীর এর জ্বালাপোড়া কমায়।
- শরীর এর হাড় মজবুত করে।
- চোখ এর দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে।
- মস্তিষ্কের নার্ভ সচল রাখে।
- ত্বক এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- চুল এর ক্ষয় রোধ করে।
- মুখ এর রুচি ফিরিয়ে আনে।
- ক্ষুধা বৃদ্ধি করে।
- শরীর এর কাটা-ছেঁড়া অংশ দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
- শরীর এর জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যাথা উপশম করে।
- বাত ব্যথা দূর করে।
- পেট ফাঁপা দূর করে।
- পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে হজম শক্তি বাড়ায়।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন এর ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়া রক্তে সুগার এর মাত্রা কমায়।
ধনিয়া পাতার ব্যবহারে সাবধানতা
ধনিয়া পাতা উপকারী বলেই যে অতিরিক্ত খেতে হবে তা ঠিক নয়। অতিরিক্ত খেলে তার
বিপরীত কার্যপ্রক্রিয়া দেখা দিবে। তাই আমাদের প্রতিটি বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন
করে চলা উচিত।
চলুন তাহলে নিচে জেনে নেই ধনিয়া পাতা ব্যবহারে সাবধানতা:
- গাছ এর চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- রোগাক্রান্ত পাতা গুলো তুলে ফেলতে হবে।
- ধনিয়া পাতা ব্যবহার করলে ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা যাবে না। এক্ষেত্রে দ্রুত চারা তুলে ফেলতে হবে।
- কীটনাশক ব্যবহার করার আগে প্যাকেট এর গায়ের লেভেল ভালো করে পড়ে নিন। অতঃপর নির্দেশাবলি মেনে কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- ধনিয়া পাতার সবজি, মসলা বা চাটনি হিসেবে ব্যবহার করলে ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা যাবে না।
- ধনিয়া পাতা অতিরিক্ত খেলে লিভার এর কার্যক্ষমতাকে অত্যন্ত খারাপ ভাবে প্রভাবিত করে থাকে।
- ধনিয়া পাতায় উপস্থিত থাকা উদ্ভিজ তেল শরীর এর বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কে আক্রান্ত করে থাকে।
- অতিরিক্ত ধনিয়া পাতায় নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি হয়।
- পেট এর সমস্যা দূর করতে ধনিয়া পাতা খাওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া হওয়া সম্ভাবনা থেকে থাকে।
- গর্ভকালীন সময় অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া বাচ্চার জন্য ক্ষতিকারক।
শেষ কথা
ধনিয়া পাতার খাদ্যমান অনেক বেশি। যারা শহরে বসবাস করে তাদের জন্য টবে ধনিয়া
পাতা চাষ করা খুবই সহজ। তাই কাঁচা বাজার এর দাম বেড়ে গেছে বলে ধনিয়া পাতা
খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। কারণ ধনিয়া পাতা আমরা অনেকেই খুব পছন্দ করি। এজন্য
উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই টবে লাগিয়ে ফেলুন ধনিয়া পাতা। যাই
হোক পরিশেষে আমার প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলব যে, পুরো পোস্টটি পড়ে
আপনার যদি একটুও ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামতটি নিচে কমেন্ট
বক্সে জানিয়ে যাবেন।
জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। সুস্থ
থাকুন ভালো থাকুন, ধন্যবাদ।