বেদানার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি বেদানার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? বেদানা ফল
আপনার পছন্দ তবে এটির উপকারিতা বা অপকারিতা সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই? যদি এমনটি
হয় তবে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে বেদনার উপকারিতা ও অপকারিতা
সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এছাড়াও বেদানা সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য দেওয়া রয়েছে
এই পোস্টে।
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো
পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন এবং আপনি
বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।
বেদানা পরিচিতি
নানারকম পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল হচ্ছে বেদানা। যা ছোট ছোট লাল দানায় ভরপুর ও বেশ
সুমিষ্ট। ছোট বড় সবাই পছন্দ করে এই ফলটি। গবেষকরা জানিয়েছেন, শরীর এর জন্য খুবই
উপকারী ফল হচ্ছে বেদনা। বহু ধর্মে এটিকে পবিত্র ফল হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।
প্রাচীন গ্রিস এর নানা রকম সাহিত্যের মধ্যেও উল্লেখ পাওয়া গেছে এই বেদানা ফলটির।
বেদানা ফল আমাদের শরীরকে সতেজ ও হাইড্রেশন মুক্ত রাখতে সাহায্যে করে। সব মিলিয়ে
এক কথায় বলা যায় স্বাস্থ্যের যত্ন নেয় বেদনা ফল।
বেদানার উপকারিতা
- শরীরে আয়রন এর ঘাটতি পূরণ করে।
- স্তন ক্যান্সার এর কোষ ধ্বংস করে।
- হার্টের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
- দাঁত শক্ত ও মজবুত করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমায়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- ওজন কমাতে ও মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
- ত্বক এর জেল্লা বৃদ্ধি পায়।
- চুল এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিল ও কঠিন সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
বেদানার উপকারিতার বিবরণ
শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ: একটু খেয়াল করলে দেখবেন কোনো ব্যক্তি যখন
অসুস্থ হয় ঠিক তখন ডাক্তার বেদানা খাওয়ার পরামর্শ দেন। তার কারণ হচ্ছে, বেদানা
স্বাস্থ্যের জন্য এক মহাঔষধ। হোক সেটা শরীরে আইরনের ঘাটতি বা অন্যান্য কোনো রোগ।
স্তন ক্যান্সার এর কোষ ধ্বংস: ২০১১ সালে ইজরায়েল মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন
জার্নালে একটি গবেষণা পত্রে প্রকাশিত হয়েছে যে, স্তন ক্যান্সার এর কোষ ধ্বংসকারী
হিসেবে বেদনা ফল এর ভূমিকা অনেক বেশি।
হার্টের ক্ষমতা: যেহেতু বেদানা ফল শরীর এর রক্তের প্রবাহ মারাত্মক ভাবে
বৃদ্ধি করে সেহেতু হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে এটাই স্বাভাবিক। শুধু তাই
নয় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক এর মতো মরণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমিয়ে
দেয়। এছাড়াও বেদানায় উপস্থিত থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হার্টের নানা রকম
খেয়াল রাখে। এক কথায় বেদানা ফল হার্টের যত্নে বিশ্বাস ভূমিকা পালন করে।
দাঁত শক্ত ও মজবুত: অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল প্রপাটিজে
পরিপূর্ণ রয়েছে বেদনা ফল। যার জন্য এই ফলটি খাওয়াই মুখের ভেতরে থাকা ক্ষতিকর
জীবাণু গুলো মারা যায়। ফলে ক্যাভিটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না বা হয় না।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকারী: ডায়াবেটিস যাদের রয়েছে তাদের যদি সামর্থ্য
থাকে তবে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই বেদনা ফল রাখবেন। কারণ বেদানা খেলে রক্তে চিনির
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। আর যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের তাদের কাছে এই রোগ ধারেও
ঘেঁষতে পারবে না।
ক্যান্সার এর ঝুঁকি: বেদনায় উপস্থিত রয়েছে, ফ্লেবোনয়েড নামক একটি
শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যার কারণে বেদনা ফল খাওয়াই রক্তে থাকা ক্যান্সার
সৃষ্টিকারী টক্সিক উপাদানকে শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে কোনো প্রকারেই শরীরের
মধ্যে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী: একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত
বেদানা অথবা বেদানার রস খেলে ব্লাড ভেসেলে সৃষ্টি হওয়া প্রদাহ কমে যায়। এমনকি
পুরো শরীরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। যার কারনে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে
আসতে একটুও সময় লাগে না। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে ও দীর্ঘকাল সুস্থ থাকতে
বেদানা ফলকে সঙ্গী বানাতে একদমই ভুলবেন না।
ওজন কমাতে ও মেদ ঝরাতে সাহায্যকারী: ওজন কমাতে ও মেদ ঝরানোর ক্ষেত্রে
বেদানা দুর্দান্ত কার্যকরী একটি ফল। তাছাড়া মেয়েদের রিউমাটয়েড আর্থাইটিস এর মত
ব্যাধি প্রতিরোধ করতেও বেদনা ফল কার্যকরী।
ত্বক এর জেল্লা বৃদ্ধি: প্রতিদিন এর খাদ্য তালিকায় যদি বেদনা রাখতে পারেন
তবে দেখবেন ত্বক এর মধ্যে একটা অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসছে। বিশেষ করে, ত্বক এর
ডার্ক স্পট ও ডার্ক সার্কেল রিমুভ করে। এছাড়াও ত্বক এর বলিরেখা দূর করে খুব
সহজেই। আস্তে আস্তে ত্বক এর জেল্লা অধিক হারে বৃদ্ধি পায়।
চুল এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি: প্রতিদিন বেদনার রস বা বেদানার জুস খেলে চুল
পড়ার পরিমাণ অনেক কমে যায়। চুল এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। চুল হয় ঝলমলে কালো ও
স্বাস্থ্যজ্জ্বল।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিল ও কঠিন সমস্যার সমাধানকারী: বেদনায় উপস্থিত
রয়েছে, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-কে। এছাড়াও আরো রয়েছে, আইরন,
পটাশিয়াম, ফাইবার, জিংক, ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ। যা
আমাদের বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
বেদানা অপকারিতা
- ত্বক এর অ্যালার্জি বাড়তে পারে।
- মানসিক রোগীদের জন্য প্রাণঘাতী।
- সর্দি কাশি বৃদ্ধি পায়।
- রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
বেদানার অপকারিতার বিবরণ
ত্বক এর এলার্জি: যদি কারো ত্বক এর এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে তবে বেদানা
খাওয়া একদমই উচিত হবে না। তার কারণ হচ্ছে, বেদানা খাওয়াতে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি
পায়। আর এমন পরিস্থিতিতে ত্বক এ যদি অ্যালার্জি থাকে তবে শরীরে লাল গোটা গোটা
হয়ে অ্যালার্জি বেড়োতে পারে।
মানসিক রোগীদের জন্য প্রাণঘাতী: যারা মানসিক রোগে আক্রান্ত রয়েছেন বা
যারা মানসিক রোগ এর জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন তাদের জন্য বেদানা প্রাণঘাতী। এ
সকল রোগীরা বেদানা ফল এড়িয়ে চলুন।
সর্দি কাশি বৃদ্ধি: সাধারণত গরমকালে বেদানা ফল বিশেষ উপকারী। তবে শীত এর
আমেজে বেদানা ফল সর্দি কাশি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও যাদের সর্দি কাশি বা ঠান্ডা
লাগার মত ধাত রয়েছে তারা বেদনা ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
রক্তচাপ কমিয়ে দেয়: বেদানা খেলে উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যা কমে যায়।
তবে আপনার যদি কম রক্তচাপ এর সমস্যা থাকে তাহলে আপনার জন্য বেদানা মারাত্মক ক্ষতি
নিয়ে আসতে পারে। কারণ এতে রক্তচাপ আরও কমিয়ে দিবে। এতে করে আপনার প্রাণ সংশয়
ঘটতে পারে।
বেদানা খাওয়ার পর কি পানি খাওয়া যায়?
যে কোনো ফল খাওয়ার পরে পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ ফল খাওয়ার পরে পানি
খেলে পেটে শোষণ এবং হজম প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে। ফলে অ্যাসিডিটি বৃদ্ধি পায়।
খেয়াল করে দেখবেন ফল খাওয়ার পরে পানি খেলে অস্বস্তি বোধ হয়। তাই বেদানা অথবা
যেকোনো ফল খাওয়ার অন্ততপক্ষে আধা ঘণ্টা বা এক ঘন্টা পর পানি পান করবেন।
পরামর্শমূলক কিছু কথা
আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি হন তাহলে উপরের ধাপ গুলো অনুসরণ করার পর আপনার
নিরাপদ মনে হলে অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেদনা ফল রাখবেন। কারণ এই ফলটি
শরীরের রক্ত তৈরিতে বিশেষ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে ও শরীরে জলের মাত্রা
বাড়ায়। এমনকি আপনার বাসায় যদি ছোট শিশু থাকে তাহলে অবশ্যই বেদানা ফল খাওয়ার
অভ্যাস করে তুলবেন।
আরো পড়ুনঃ স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় জানুন
তার কারণ হচ্ছে, বেদনা ফল স্মৃতিশক্তি প্রখর করে এবং শরীরকে এনার্জিটিক রাখে।
পরিশেষে আমার প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চাই যে, পুরো পোস্টটি পড়ে
আপনার যদি একটু ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামতটি নিচে কমেন্ট
বক্সে জানিয়ে যাবেন।
জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। সুস্থ
থাকবেন ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।
সূত্র: হেলথ ডাইজেস্ট