পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা জানতে চান? পেয়ারা ফল
আপনার অতি প্রিয় তবে তার উপকারিতা কতটুকু তা জানেন না? যদি তাই হয় তাহলে আজকের
এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে পেয়ারা ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানানো
হয়েছে। তার পাশাপাশি পেয়ারা ফল সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য দেওয়া রয়েছে এই
পোস্টে।
বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো
পোস্টটি পড়ে আপনার মনে ঘুরপাক করা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আজকের এই
পোস্টটি পড়ে আপনার অনেক ভালো লাগবে এবং আপনার উপকারে আসবে, ধন্যবাদ।
পেয়ারার ভূমিকা
পেয়ারা ফলে নিজস্ব স্বাদ এবং নানা উপকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অন্যান্য উপকারী ফল
গুলোর মধ্যে পেয়ারা অন্যতম স্বাস্থ্যের জন্য। শুধু তাই নয় রোগ নিরাময়ের জন্য
ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে এই ফল। প্রায় সারা বছর পাওয়া যায় এই পেয়ারা
ফল। দামে সস্তা ও অতি সহজলভ্য এই দেশীয় পেয়ারা ফল। পেয়ারায় উপস্থিত রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন-সি। এতো পরিমাণে ভিটামিন-সি অন্য কোনো ফলে পাওয়া যায় না
শুধুমাত্র আমলকি ও পেয়ারা ফল ছাড়া।
পেয়ারা ফল এর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, এক হালি বা চারটি কমলা লেবুর সমান পুষ্টিগুণ বিদ্যমান
রয়েছে একটি পেয়ারায়। একটি পেয়ারা ফল এ রয়েছে চারটি কমলা লেবু ও চারটি আপেল এর
সমান পুষ্টিগুণ। তার কারণ হচ্ছে, ভিটামিন-সি এর ভালো উৎস পেয়ারা ফল। ২১১
মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন-সি পাওয়া যায় এই ফলে। আর এই ভিটামিন-সি বিশেষ করে দাঁত,
মাড়ি ও মুখগহ্বর সুস্থ্য রাখে।
পেয়ারা ফল এর উপকারিতা
পেয়ারা ফলে রয়েছে, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-কে, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম,
প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রচুর পরিমাণে পানি।
চলুন তাহলে নিচে জেনে নিই নানান পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পেয়ারা ফল এর উপকারিতা সমূহ:
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
- ক্যান্সার রোগ দমন করে।
- ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখে।
- দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্যে করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- স্ট্রেস থেকে দূরে রাখে।
- মস্তিষ্ক ভালো রাখে।
- বুদ্ধি বৃদ্ধি করে।
- ঠান্ডাজনিত সমস্যা কম হয়।
- পেট এর সমস্যার সমাধান করে।
- পিরিয়ডের ব্যাথা কমায়।
- ত্বক ও চুল ভালো রাখে।
- মুখের ভেতর সাদা দাগ দূর করে।
উপকারিতার বর্ণনা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে: শরীরের কোনো স্থানে কেটে গেলে তা
শুকানোর জন্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর এই পেয়ারা ফলে রয়েছে,
প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি। যা সম্পূর্ণরুপে রোগ প্রতিরোধক
হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও শরীরে আক্রমণ করা বিভিন্ন রোগকে দমন করার শক্তি জোগান
দেয়।
ক্যান্সার রোগ দমন করে: গবেষকরা জানিয়েছেন যে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও
লাইকোপেন ক্যান্সার কোষ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়। এছাড়াও প্রোষ্টেট ও
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পেয়ারা ফল এর ভূমিকা অনেক বেশি।
ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখে: ডায়াবেটিস মেলিটাস এর চিকিৎসায় পেয়ারার রসে
থাকা উপাদান গুলো খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয় ডায়াবেটিস
প্রতিরোধে পেয়ারা পাতাও কার্যকরী।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে: ভিটামিন-এ এর ভালো উৎস হচ্ছে কাঁচা
পেয়ারা। আর এই পেয়ারায় বিদ্যমান থাকা ভিটামিন-এ কর্নিয়াকে সুস্থ রাখার
পাশাপাশি রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। তাই প্রতিদিন এর খাদ্য তালিকায়
দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই পেয়ারা ফল রাখা উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: পেয়ারা ফলে উপস্থিত থাকা পটাশিয়াম
রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও গোলাপি রঙ্গের পেয়ারা যা লাইকোপিন
সমৃদ্ধ তা নিয়মিত খেলে কার্ডিওভাস্কুলার রোগ এর ঝুঁকি অধিক হারে কমে যায়।
স্ট্রেস থেকে দূরে রাখে: পেয়ারা ফল স্ট্রেস থেকে দূরে রাখতে দারুন কাজ
করে। শরীরে পেশি আর স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে তোলে ও নানা প্রকার চাপ
কমায়, শক্তি বাড়ায়।
মস্তিষ্ক ভালো রাখে: পেয়ারা ফলে রয়েছে ভিটামিন বি৩ এবং বি৬। যা
মস্তিষ্কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এতে করে
মস্তিষ্ক ভালো থাকে।
বুদ্ধি বৃদ্ধি করে: শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের
ক্ষেত্রে পেয়ারা ফল সবচাইতে বেশি কার্যকরী। তার কারণ হচ্ছে, পেয়ারায় থাকা
ভিটামিন বি৩ ও নিয়াসিন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এর পাশাপাশি
মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়াও ভিটামিন বি৬ ও
পিরিয়ডক্সিন মস্তিষ্কের নার্ভের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে অধিক হারে সহায়তা করে।
ঠান্ডা জনিত সমস্যা কম হয়: বিভিন্ন প্রকার ঠান্ডা জনিত সমস্যা যেমন
শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করে তোলে পেয়ারা ফল।
পেয়ারায় থাকা আইরন ও ভিটামিন-সি ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে বাচায়।
পেট এর সমস্যার সমাধান করে: গবেষকরা জানিয়েছেন যে, যেকোনো ব্যাকটেরিয়া
সংক্রমণ ও পেটের গোলযোগে সবচেয়ে কার্যকরী হলো পেয়ারা ফল। এছাড়াও চিকিৎসকের
পরামর্শ থেকে জানা যায় যে, পেয়ারা ফল এর রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় সহ পেট এর
বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পেয়ারা ফল খুব ভালো কাজ করে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমায়: অনেক মহিলাদের পিরিয়ড চলাকালীন সময় তলপেটে তীব্র
ব্যথা হয়ে থাকে। আর এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন রকম ওষুধ সেবন করতে হয়।
এ সময় প্রাকৃতিক উপায়ে যদি কেউ পেয়ারার পাতা চিবিয়ে রসটি খেয়ে নেন তাহলে
তৎক্ষণাৎ পিরিয়ড এর ব্যথা উপশম হয়ে যাবে।
ত্বক ও চুল ভালো রাখে: প্রচুর পরিমাণে পানি বিদ্যমান থাকায় ত্বক ও চুল
ভালো রাখতে সক্ষম হয় পেয়ারা ফল। এই ফলটি শীতের আমেজ এ ত্বকের রুক্ষ ভাব দূর করে
এবং পা ফাটা রোধ করে। খাদ্য তালিকায় ফলের মধ্যে পেয়ারা ফল রাখলে তারুণ্যতা ধরে
রাখে দীর্ঘদিন।
মুখের ভেতর সাদা দাগ দূর করে: অনেক সময় অনেকের মুখের ভেতর সাদা দাগের মতো
একটি আলসার দেখা দিয়ে থাকে। এই সমস্যাটি মূলত ভিটামিন-সি এর অভাবে হয়ে থাকে।
তাই পেয়ারা ফল খেলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পেয়ারা ফল এর আরো অন্যান্য উপকারিতা অতি সংক্ষেপে ক্রমানুসারে নিচে দেওয়া
হলো-
- পেয়ারায় উপস্থিত থাকা লাইকোপেন, কুয়েরসেটিন, ভিটামিন-সি এবং পলিফেনল শরীরের ভেতর থেকে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে।
- ইগ্লিসারাইড এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্টের যেকোনো সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
- শরীরের সোডিয়াম ও পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট ভালো রাখতে সক্ষম হয়।
- অতিরিক্ত মেদ ঝরতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে।
- পেয়ারা ফল চিবিয়ে খেলে দাঁত ভালো থাকে।
- বয়সের ছাপ কমিয়ে থাকে।
পেয়ারা ফল খেলে কি স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়?
পেয়ারা ফল এর মধ্যে পটাশিয়াম ও ফাইবার বিদ্যমান থাকার কারণে আপনি যদি কোনো রকম
স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে পেয়ারা ফল এড়ানো আপনার জন্য শ্রেয়। সবচেয়ে
ভালো হয় একজন দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পেয়ারা ফল খাদ্য তালিকায় রাখা।
পরামর্শ মূলক কথা
ছোট বড় নানা ব্যাধি ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয় পেয়ারা ফল পেয়ারা ফল। সুঘ্রান
যুক্ত সুন্দর এই ফলটির কথা যতই বলবো ততই যেন কম হয়ে যায়। তবে যেমন উপকারিতায়
ভরপুর ঠিক তেমনি তার অপকারিতাও রয়েছে। তাই সবচেয়ে বেশি ভালো হয় ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকায় সঠিক ফল সেবন করা। যাই হোক, উপরে উল্লেখিত
সম্পূর্ণ লেখাগুলো পরে আপনার যদি একটুও ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট
বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানিয়ে যাবেন।
জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। সুস্থ
থাকবেন ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।