পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? পুদিনা পাতার ঘ্রাণ আপনার অতি পছন্দের তবে তার উপকারিতা কতটুকু জানেন না? যদি তাই হয়ে থাকে তবে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি পুদিনা পাতা সম্পর্কে আরও অজানা তথ্য দেওয়া রয়েছে এই পোস্টে।
বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পোস্টটি পড়ে আপনার মনে ঘুরপাক করা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আজকের এই পোষ্টটি পড়ে আপনার অনেক ভালো লাগবে এবং আপনার উপকারে আসবে, ধন্যবাদ।

পুদিনা পাতার ভূমিকা


পুদিনা পাতা হচ্ছে চমৎকার সুগন্ধের অধিকারিনী। উপকারী এই ভেষজ খাবারের সুগন্ধ যোগ করার পাশাপাশি পুষ্টিরও যোগান দিয়ে থাকে। ত্বকের যত্নে নানান পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় এই পুদিনা পাতা। এছাড়া চুলের যত্নে পুদিনা তেল ব্যবহার হয়ে থাকে। এমনকি মাথা ব্যাথার মত সমস্যাও দূর করতে কার্যকরী তেল হচ্ছে পুদিনা পাতা।

পুদিনা পাতার গুনাগুন


  • ব্রণ দূর করে।
  • রোদে পোড়া ত্বকের জ্বালা কমায়।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
  • মাথার চুলকে উকুনমুক্ত করে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে।
  • হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষিত রাখে।
  • হাঁপানি রোগ নিরাময় করে।
  • মানসিক স্বস্তি দেয়।
  • ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে বাঁচিয়ে রাখে।
  • অস্বাভাবিক গরম থেকে বাঁচিয়ে শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
  • হজমের সমস্যা ও পেট ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
  • মাথা ব্যথা ও জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যাথা থেকে মুক্ত করে।

পুদিনা পাতার গুনাগুনের বর্ণনা


ব্রণ দূর করে: পুদিনা পাতা ব্রণ দূর করতে ও ত্বকের তেলচে ভাব কমাতে বেশ কার্যকরী। তাজা পুদিনা পাতা সংরক্ষণ করে সেটি বেটে ত্বক এ লাগান। এরপর ১৫ মিনিট রেখে সেটি ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন অনেকটাই উপকারে আসবে। এছাড়াও আরেকটি পদ্ধতি হলো- রাতে ঘুমানোর সময় পুদিনার পাতা রস ত্বক এ লাগান। এরপর এটি সারারাত রেখে দিন। অনেকে বিরক্ত বোধ করে তাদের ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন ঘন্টা রাখলেই চলবে।

রোদে পোড়া ত্বকের জালা কমায়: পুদিনা পাতার রস রোদে পোড়া ত্বক পুনর্জীবিত করে। অ্যালোভেরার রস ও পুদিনা পাতার রস একসাথে মিশ্রণ করে সেটি রোদ এ পোড়া ত্বকে লাগান। ২০ মিনিট রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করলে রোদে পোড়া ত্বক ফিরে পাবেন।


ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: পুদিনা পাতার টোনার তৈরি করে ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও ত্বক মসৃণ হয়। টোনার তৈরি করার পদ্ধতিটি হল: পুদিনা, আমলা, গোলাপ, শসা ও বাঁধাকপির নির্যাস একসঙ্গে মিশ্রিত করে টোনার তৈরি করে নিতে হবে। নিয়মিত এই টোনারটি ত্বকে লাগালে বয়সের ছাপ পড়ে না।

মাথার চুলকে উকুনমুক্ত করে: উকুন দূর করার জাদুকরী ঔষধ হলো পুদিনা পাতা বা শিকড়ের রস। পুদিনা পাতার রস বা শেকড়ের রস সম্পূর্ণ মাথায় চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগাতে হবে। এরপর পাতলা সুতি কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় সপ্তাহে অন্ততপক্ষে দুইবার এটি করা। দেখবেন এক মাস এর মধ্যেই ভালো ফলাফল পেয়ে যাবেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে: অসংখ্য বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে পুদিনা পাতা। আশ্চর্যজনক হলেও একথা সত্যি। পুদিনা পাতায় উপস্থিত রয়েছে পেরিলেল অ্যালকোহল। যা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসের একটি উপাদান। যা দেহে ক্যান্সার এর কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে থাকে।

হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে: পুদিনা পাতা রক্তে " কর্টিসল " হরমোন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। জৈবিক মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষমতাকে সক্রিয় করে। আবার পুদিনা পাতার এসেন্সিয়াল অয়েল ও বিশেষ ভূমিকা রাখে। এসেন্সিয়াল অয়েল এর ঘ্রাণ তাৎক্ষণিক রক্তে "সেরোটোনিন" হরমোন নিঃসরণ করে থাকে। এই হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকলে মানসিক অস্থিরতা দূর হয় ও হতাশা কমে যায়।


দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষিত রাখে: দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা হচ্ছে আদর্শ উপাদান। পুদিনা পাতা নির্যাস মুখের ভেতর এর জীবাণু ধ্বংস করে থাকে। এতে দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষিত থাকে।

হাঁপানির রোগ নিরাময় করে: যারা নিয়মিত পুদিনা পাতা বা পাতার রস পান করে থাকে তাদের বুকে কফ জমার সম্ভাবনা একদমই থাকে না। এখানেও মুখ্য ভূমিকা রেখেছে 'মেন্থল'। এই মেন্থল ফুসফুসে আটকে যাওয়া মিউকাস ছাড়িয়ে থাকে। যার ফলে শ্বাস নেওয়ার কষ্ট খানিকটা কমে যায়। তবে হাঁপানি রোগ নিরাময় করতে অতিরিক্ত খাবেন না। এটা হিটে বিপরীত হয়ে শ্বাসনালীতে অস্বস্তি দেখা দিবে।

মানসিক স্বস্তি দেয়: চিকিৎসাবিদরা জানিয়েছেন যে, সুগন্ধি ভিত্তিক পুদিনা পাতা প্রথম সারির উপাদান। পুদিনা পাতার কড়া সুগন্ধ-
  • মানসিক চাপ দূর করে।
  • হতাশা দূর করে।
  • শরীরকে চনমনে করে তোলে।
ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে বাঁচিয়ে রাখে: অনেক সময় সর্দি লাগলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসে অনেক কষ্ট হয়। সেই সময় এই কষ্ট থেকে নিমিষে রেহাই পেতে পুদিনা পাতার রস বেশ কার্যকরী। আবার অনেকেই কাশি বা এ্যাজমার সমস্যায় ভোগে। তাদের তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য পুদিনা পাতা প্রয়োজন। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট ও কাশির সমস্যায় ভুগলে পুদিনা পাতা গরম জলে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই জলের ভাপ নিতে হবে। অনেকে ভাপ নিতে সহ্য করতে পারে না। এক্ষেত্রে অন্যথায় পদ্ধতি ব্যবহার করতে ফুটানো পুদিনার জল দিয়ে গার্গল করার অভ্যাস তৈরি করুন।


অস্বাভাবিক গরম থেকে বাঁচিয়ে শরীরকে ঠান্ডা রাখে: গরমকালে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে পুদিনার রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গোসল এর ঠিক আধ ঘন্টা আগে জলের মধ্যে কিছু পুদিনা পাতা ছড়িয়ে রাখুন। এবার সেই জল দিয়ে গোসল করুন। এতে করে শরীর মন দুটোই চাঙা থাকে।

হজমের সমস্যা ও পেট ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়: পুদিনা পাতা পেটে যে কোনো সমস্যার সমাধান দ্রুত করতে পারে। পুদিনা পাতায় থাকা প্রাচুর্য যেমন: মেন্থল, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ইত্যাদি উপাদান গুলো হজম এর জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করে থাকে। আরো রয়েছে পুদিনা পাতার এসেন্সিয়াল অয়েল যা শক্তিশালী জীবাণুনাশক ক্ষমতা রাখে। পাকস্থলীকে শীতল করে তোলে যার কারণে অম্লীয় খাবার সামাল দিতে সুবিধা হয়। এর ফলে হজমের সমস্যা সমাধান হয় ও পেট ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মাথা ব্যথা কমায়: পুদিনা পাতায় থাকে মেন্থল। যা পেশীকে শিথিল করে তোলে ও মাথা ব্যথা কমিয়ে থাকে। এছাড়াও পুদিনা পাতার নির্যাস থেকে তৈরি করা হয় অসংখ্য মাথা ব্যথার মলম। যারা মলম ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না তারা সরাসরি পুদিনা পাতার রস কপালে লাগাবেন। তৎক্ষণাৎ মাথা ব্যথা কমে যাবে।

পরামর্শ মূলক কথা


নানান পুষ্টির যোগান দেয় উপকারী এই ভেষজ পুদিনা পাতা। চমৎকার সুগন্ধিযুক্ত এই পুদিনা পাতা কারো পছন্দের আবার কারো অপছন্দের। শরীরকে সতেজ রাখতে পুদিনা পাতা যদিও বা অপছন্দের হয়ে থাকে তবে তা ব্যবহারে আগ্রহী হন। এক কথায় পুদিনা পাতার নিজস্ব ঘ্রাণ, স্বাদ ও পুষ্টি অতুলনীয়। তবে এই পুদিনা পাতার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। সবচেয়ে ভালো হয় চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা। যাই হোক, উপরে উল্লেখিত সম্পূর্ণ লেখাগুলো পড়ে আপনার যদি একটুও ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানিয়ে যাবেন।

জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের মূল্যবান কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন