তুলসী পাতার বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা গুলো জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি কি তুলসী পাতার বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে
চান? তুলসী পাতার ঘ্রাণ আপনার অতি পছন্দের বা আপনার বাসায় তুলসী পাতা আছে তবে
তার উপকারিতা কতটুকু জানেন না? যদি তাই হয় তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য।
কারণ এই পোস্টে তুলসী পাতার বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি তুলসী পাতা সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য দেওয়া রয়েছে এই পোস্টে।
বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পোস্টটি
পড়ে আপনার মনে ঘুরপাক করা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আজকের এই পোস্টটি
পড়ে আপনার অনেক ভালো লাগবে এবং আপনার উপকারে আসবে, ধন্যবাদ।
তুলসী পাতার ভূমিকা
সুগন্ধি যুক্ত তুলসী পাতা যার গুনাগুন বলে শেষ করা সম্ভব না। বিশেষজ্ঞরা
জানিয়েছেন যে, শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে হলে প্রতিদিন একটি করে হলেও তুলসী
পাতা চিবিয়ে খেতে হবে। এই তুলসী পাতার গাছ বাসার বারান্দায় লাগানো যায় অর্থাৎ
যেখানে আলো বাতাস চলাচল করে সেখানেই এই উপকারী গাছটি লাগাতে পারেন। তুলসী পাতাকে
ওষধি পাতাও বলা হয়। শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই তুলসী পাতা
সেবন করতে পারে।
তুলসী পাতার বৈশিষ্ট্য
নানান বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এই তুলসী পাতা। তুলসী পাতায় অগণিত ডিটক্সিফাইং
বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ গুলো দূর করে থাকে। এছাড়া
সামগ্রিক ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে ঠান্ডা জনিত
সমস্যার জন্য তুলসী পাতা এক বিশেষ মহাঔষধ। সর্দি-কাশি, কফ, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা
ইত্যাদি সারিয়ে তুলতে তুলসী পাতার ভূমিকা অনেক বেশি। কণ্ঠস্বর ঠিক রাখতে তুলসী
পাতার চা অনেক কার্যকরী। এছাড়া তুলসী পাতায় উপস্থিত থাকা অনেক রকম ভিটামিন
শারীরিক অসুস্থতা ছড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং সুস্থতা বজায় রাখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুদিনায় উপস্থিত রয়েছে- পলিফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অপরিহার্য
তেলের মতো যৌগ। এই উপাদান গুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যখন
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে তখন শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রী রেডিক্যালগুলোকে
নিরপেক্ষ করে থাকে। যার ফলে কোষগুলো ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে এবং
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস পায়।
তুলসী পাতার উপকারিতা
তুলসী পাতার উপকারিতা ও গুনাগুন অনেক বেশি। নিচে তা ক্রমানুসারে দেওয়া
হলো:
- ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে বিরত রাখে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- প্রদাহ কমিয়ে থাকে।
- মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- হজম শক্তির উন্নতি ঘটায়।
- স্ট্রেস থেকে মুক্তি দেয়।
তুলসী পাতার উপকারিতার বিবরণ
ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে বিরত রাখে: সাধারণত তুলসী পাতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে সর্দি,
কাশি ও হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্ট রোগ দূর করার ক্ষেত্রে। তুলসী পাতার রস পান করলে
শ্বাসযন্ত্রের অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেয় এবং শ্বাসযন্ত্রের উপর প্রশান্তিদায়ক
প্রভাব ফেলে। চিকিৎসাবিদরা জানিয়েছেন যে, তুলসী পাতার বা পাতার রস কফ এর মহৌষধ।
তুলসী পাতায় অন্টিটিউসিভ এর বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা থেকে উপকারিতা মেলে-
- সর্দি কাশির লক্ষণ গুলো দূর করে থাকে।
- কফ এর উপসর্গ হিসেবে কাজ করে।
- জ্বালাপোড়া ভাব কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: তুলসী পাতার বৈশিষ্ট্য স্বরূপ
ইমিউনোমোডুলেটরি রয়েছে। এটি থাকার কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
বিশেষ ভূমিকা রাখে। শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং শরীরকে সংক্রমনের
হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে তুলসী পাতার রস অবশ্যই পান করতে হবে।
প্রদাহ কমিয়ে থাকে: তুলসী পাতায় রয়েছে অপরিহার্য তেল। আর সেই
তেল গুলো হচ্ছে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যের ভূমিকা পালন করে। প্রদাহ এবং প্রদাহ
সম্পর্কিত উপসর্গ গুলো কমাতে সাহায্য করে থাকে তুলসী পাতায় উপস্থিত থাকা
অপরিহার্য তেল।
আরো পড়ুনঃ পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: তুলসীতে থাকা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল
মুখে সংক্রমন এর বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। এছাড়াও সামগ্রিক মুখের স্বাস্থ্যের
উন্নতি ঘটায় তুলসী পাতা। এমনকি তুলসীর পানি দিয়ে যদি গার্গল করা যায় তবে
মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়।
হজম শক্তির উন্নতি ঘটায়: বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, তুলসীতে থাকা
কার্মিনেটিভ বৈশিষ্ট্য হজমে বিশেষ সহায়তা করে এবং গ্যাস ও ফোলা ভাব কমাতে
সাহায্য করে। পাচনতন্ত্র প্রশমিত করতে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে তুলসীর পানি পান
করা অপরিহার্য। তুলসীর পানি হজম এর ব্যাধি গুলোকে দূর করে থাকে। এছাড়াও তুলসীর
পানি পান করলে শরীর এর বিষাক্ত পদার্থ ও জীবাণু বের হয়ে যায়।
স্ট্রেস থেকে মুক্তি দেয়: তুলসী নিয়ে গবেষকদের মতামত যে, এটি
একটি অভিযোজনীয় ভেষজ। যার শরীরকে চাপের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং শান্ত ও
শিথিলতার অনুভূতি প্রচার করতে সহায়তা করে থাকে। তুলসী পানি পান করলে মানসিক চাপ
ও উদ্বেগ দুটোই কমে থাকে।
তুলসী পাতার চা
তুলসী পাতা চায়ের স্বাদ বৃদ্ধি করে ও অত্যাধিক সুগন্ধি ছড়ায়। তবে তুলসির চা
সবার জন্য অপরিহার্য নয়। তাই ভেষজ চা পান করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
উচিত।
তুলসীর চা তৈরির কিছু নিয়মাবলী-
- পাঁচ থেকে ছয়টি তাজা তুলসীর পাতা নিতে হবে। এবার সেটি পরিষ্কার করে ধুয়ে আলাদা করে রেখে দিতে হবে৷ এক কাপ জলের মধ্যে তাজা তুলসী পাতাগুলো দুই থেকে তিন মিনিটের মতো ফুটিয়ে নিতে হবে। সেই জলটি গরম গরম পান করতে হবে।
- প্রথমে এক গ্লাস জলে এক মুঠো তুলসী পাতা ফুটিয়ে নিতে হবে। ১০ মিনিট ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর এতে একটি লেবু ও এক চামচ মধু মেশাতে হবে। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আরেকটি হচ্ছে মধু যা এনার্জি যোগান দেয়। এবার গরম গরম পান করুন তুলসীর চা।
- প্রথমে তিন কাপ পানি চা বানানোর পাত্রে নিতে হবে। এবার পরিমাণ মতো তুলসী পাতা কুচি করে নিতে হবে এর সাথে আদা কুচি ও এলাচ গুঁড়া নিতে হবে। তুলসী পাতা কুচি আদা কুচি ও এলাচ গুড়া পানিতে ঢেলে দিয়ে দশ মিনিট থেকে বারো মিনিট ফুটাতে হবে। এরপর গরম জল টি পরিষ্কার করে ছেঁকে চায়ের কাপে ঢেলে নিতে হবে। চায়ের স্বাদ আরো অতুলনীয় করে তুলতে মধু ও লেবুর রস মেশাতে হবে। তৈরি হয়ে যাবে তুলসীর চা।
তুলসীর পাতার চা কোন কোন ক্ষেত্রে বিপজ্জনক?
- বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, তুলসী পাতা প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। সে ক্ষেত্রে কোনো দম্পতি যদি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করে থাকে তাহলে তুলসীর চা এড়িয়ে চলতে হবে। তার কারণ হচ্ছে, শুক্রানুর সংখ্যা ও গতিশীলতার ওপর এই ভেষজটি বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে।
- রক্ত পাতলা করার ওষুধ খেলেও তুলসির পাতার চা সেবন করা যাবে না। কারন তুলসীর চা ও রক্ত পাতলা করে থাকে। দুটি একসঙ্গে সেবন করলে রক্ত অতিরিক্ত পাতলা হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকবে।
- তুলসী পাতা শরীরে রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতাকে ধীর করতে সাহায্য করে। তাই সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার এর আগে তুলসীর চা সেবন করা যাবে না।
পরামর্শ মূলক কিছু কথা
তুলসী একটি আয়ুর্বেদিক ভেষজ। আধুনিক চিকিৎসা আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ
নির্ভর করত এই সকল ভেষজ ওষুধে। এমনকি তুলসী পাতাকে ভেষজের রানীও বলা হয়। এই
তুলসী গাছ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র গাছ হিসেবে বিবেচিত। এই ধর্মের
অনুপাতে তারা গৃহ দেবতার পূজোয় বা ভোগে এই তুলসী পাতা ব্যবহার করে থাকে। তবে
অন্যান্য সব ধর্মাবলম্বীদের কাছে রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে তুলসী পাতার জুড়ি মেলা
ভার। যাই হোক, উপরে উল্লেখিত সম্পূর্ণ লেখাগুলো পড়ে আপনার যদি একটুও ভালো লেগে
থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানিয়ে যাবেন।
জিসান স্প্ল্যাশ যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। ভালো থাকবেন
সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ।