পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? আপনার বাসায় পাথরকুচি গাছ আছে তবে তার উপকারিতা কতটুকু আপনি জানেন না? যদি এমনটি হয় তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি পাথরকুচি পাতা সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য দেওয়া রয়েছে এই পোস্টে।
বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পোস্টটি পড়ে আপনার মনে ঘুরপাক করা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনার অনেক ভালো লাগবে এবং আপনার উপকারে আসবে, ধন্যবাদ।

পাথরকুচি পাতার ভূমিকা


পাথরকুচি একপ্রকার ঔষধি উদ্ভিদ। এটি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। ভেষজ উদ্ভিদ নামেও পরিচিত। এই পাথরকুচি পাতা ঘরোয়া পদ্ধতিতে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিরাময় করে থাকে। ভেষজ চিকিৎসায় পাথরকুচি পাতার ব্যবহার অনেক বেশি। বৈজ্ঞানিক জগতে পাথরকুচি পাতাকে ব্রায়োফাইলাম নামে ডাকা হয়। এই ভেষজ উদ্ভিদটি এক থেকে দুই ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে। পাতা ডিম্বাকৃতি মাংসল এবং পুরু ও পাতার রং সবুজ হয়ে থাকে। পাতা চারপাশে খাঁজের মত অংশ রয়েছে। পাথরকুচি পাতার নানা বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা রয়েছে। 


চলুন তাহলে নিচে জেনে নেই পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য-

পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পাথরকুচি পাতা অতুলনীয়। ঠাণ্ডা বা সর্দি লাগলে পাথরকুচি পাতার রস গরম করে খেলে উপকার মেলে। ছোট বড় সকলেরই মূত্র রোধে পাথরকুচি পাতার রস বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মূত্রনালীর যে কোনো সংক্রমণে, পেট ব্যথায়, পেট ফাঁপায়, রক্তপিত্তে ও মৃগী রোগীদের পাথরকুচির রস পান করানো হয়। এমনকি মূত্র পাথর সারিয়ে দিতেও সক্ষম হয় এই পাথরকুচি পাতা। এছাড়া ব্রণ, ক্ষতস্থান, থেতলে যাওয়া স্থান, বিষাক্ত পোকায় কামড়ানোর স্থান সকল জায়গাতে পাথরকুচি পাতার রস আগুনে শেঁকে লাগালে তৎক্ষণাৎ উপকার মেলে।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা


  • ইউরিন ইনফেকশন দূর করে।
  • ঠান্ডা লাগা ও সর্দি নিরাময় করে।
  • টক্সিন দূর করে।
  • জন্ডিস হতে রক্ষা করে।
  • মাথাব্যথা নিরাময় করে।
  • আমাশয় থেকে মুক্তি দেয়।
  • পাইলস সমস্যার সমাধান করে।
  • ত্বকের এলার্জি সমস্যা দূর করে।
  • ত্বক ভালো রাখে।
  • চুল পাকা রোধ করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • শরীরের জ্বালাপোড়া নিরাময় করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • কিডনির পাথর অপসারণ করে।
  • মৃগী রোগ থেকে বাঁচায়।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতার বর্ণনা


ইউরিন ইনফেকশন দূর করে: পাথরকুচি পাতার রস তৃষ্ণা নিরাময়ের জন্য বিশেষ কার্যকরী। এছাড়াও এই ঔষধি পাতার রস ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। দিনে দুইবার করে এই পাতার রস পান করতে হবে। এতে ইউরিন ইনফেকশন সমস্যা দূর হবে ও রক্তে সুগার এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ঠান্ডা লাগা ও সর্দি নিরাময় করে: ঠান্ডা লাগা ও সর্দি নিরাময় করতে পাথরকুচি পাতা যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। বুকে যদি পুরনো সর্দি জমা হয়ে থাকে তবে তিন থেকে চারটি পাথরকুচি পাতা গরম করে রস বের করে নিতে হবে। এর মধ্যে এক চিমটি লবণ দিতে হবে। এভাবে যতদিন সর্দি লেগে থাকবে ততদিন দিনে অন্ততপক্ষে তিনবার করে এক টেবিল চামচ পান করতে হবে। এতে বেশ উপকার মেলে।

টক্সিন দূর করে: পাথরকুচি পাতার রস টক্সিন দূর করে থাকে ওর রক্ত বিশুদ্ধ করে থাকে। অতিরিক্ত ব্যথা হলে সেই স্থানে এই ঔষধি পাতার রস লাগালে তৎক্ষণাৎ আরাম পাওয়া যায়।

জন্ডিস হতে রক্ষা করে: পাথরকুচি পাতা হচ্ছে জন্ডিস রোগের মহাঔষধ। জন্ডিস রোগ থেকে রক্ষা পেতে অথবা লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পাথরকুচি পাতা চিবিয়ে খেলে বেশ উপকার মেলে। এছাড়াও পাথরকুচি পাতার রস থেকে জুস তৈরি করে খেলেও চলবে।

মাথাব্যথা নিরাময় করে: মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার ভূমিকা অনেক বেশি। পাথরকুচি পাতা গুঁড়ো করে কপালে লাগালে মাথা ব্যথা খুব দ্রুত নিরাময় হয়ে যায়। এছাড়া শরীরের কোন ফোলা স্থানে এই ওষুধি পাতা পেস্ট করে লাগালে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।


আমাশয় থেকে মুক্তি দেয়: পেট এর গোলযোগ সমস্যায় পাথরকুচি পাতার বিকল্প নেই। পেট এর কৃমি দূর করতে ও আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে পাথরকুচি পাতার রস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পাথরকুচি পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে আমাশয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ঠিক একইভাবে দিনে দুইবার পান করলে কৃমি থেকেও দূরে থাকা যায়।

পাইলস সমস্যার সমাধান করে: পাথরকুচি পাতার রস বের করে তার সাথে গোল মরিচ মিশ্রিত করে পান করলে পাইলস সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ত্বকের এলার্জি সমস্যা দূর করে: পাথরকুচি পাতা ত্বকে শুষ্কতা দূর করে ও এলার্জি সমস্যা রোধ করে। পাথরকুচি পাতার রস গোলাপ জলের সঙ্গে মিশ্রিত করতে হবে। তারপর এটি আলতো ভাবে ত্বকে লাগাতে হবে। এতে করে এলার্জি সমস্যা একেবারে দূর হয়ে যাবে।

ত্বক ভালো রাখে: পাথরকুচি পাতায় অতিরিক্ত মাত্রায় পানি থাকে যা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়াও পাথরকুচি পাতার রসে ত্বক এর জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। যারা ত্বক সম্বন্ধে অধিক সচেতন তারা অবশ্যই পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগিয়ে রাখে। তার কারণ হচ্ছে ত্বক এর স্বাস্থ্য ভালো রাখে পাথরকুচি পাতা। এছাড়াও এই প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করলে ব্রণ ও ফুসকুড়ি জাতীয় সমস্যাও দূর হয়ে যায়।


চুল পাকা রোধ করে: মাথার ত্বক এর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুব উপকারী পাথরকুচি পাতা। পাথরকুচি পাতার রস মাথার ত্বক এর স্বাস্থ্য খুব ভালো রাখে। নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস পান করলে চুল পাকা রোধ হয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে: পাথরকুচি পাতার রস ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশ্রিত করে খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও রক্তক্ষরণ বন্ধ করার ক্ষেত্রে পায়ের তলদেশে এই ভেষজ পাতাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

শরীরে জ্বালাপোড়া নিরাময় করে: পাথরকুচি পাতার রস শরীরে জ্বালাপোড়া কমাতে সক্ষম হয়। আধা কাপ পরিমাণ গরম পানির সাথে দুই চামচ পরিমাণ পাথরকুচি পাতার রস মিশ্রিত করে নিতে হবে। এবার এই মিশ্রণটি দিনে দুবার খেলে শরীরে জ্বালাপোড়া নিরাময় হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: পাথরকুচি পাতা শুকিয়ে তা গুঁড়ো করতে হবে। এবার এই গুঁড়ো দিয়ে পাথরকুচি পাতার চা তৈরি করতে হবে। এই পাথরকুচি পাতার চা পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কিডনির পাথর অপসারণ করে: পাথরকুচি পাতা পাথর অপসারণ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই কিডনি এবং গলব্লাডার এর পাথর অপসারণ করে থাকে এই পাথরকুচি পাতা।

মৃগী রোগ থেকে বাঁচায়: মৃগী রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে পাথরকুচি পাতার রস ৮ থেকে ১০ ফোঁটা করে মুখে দিতে হবে। এই পাথরকুচি পাতার রস পেটে যাওয়া সাথে সাথেই মৃগী রোগ এর উপশম হবে।

পাথরকুচি কি বংশ বিস্তার করে?


পাথরকুচি একটি শাখা বিহীন গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। পাথরকুচি বংশবিস্তার বা নতুন চারা উৎপাদন করে থাকে। পাথরকুচি গাছ থেকে একটি পরিপক্ক পাতা ছিড়ে যদি সেটি মাটিতে রেখে দেওয়া হয় তবে কিছুদিন পর পাতার কিনারা থেকে একাধিক নতুন চারা গজাবে। এমনকি পাতা থেকে এই চারা গজানোর জন্য বিশেষ কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। তবে মাঝে মধ্যে পানির ছিটা দিলে ভালো হয়। সর্বত্র স্থানে এই পাথরকুচি পাতা জন্মায়।

পরামর্শমূলক কিছু কথা


প্রাচীনকাল থেকেই আমরা নানা রোগ এর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ঔষধি গাছ ব্যবহার করে আসছি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, বিভিন্ন রোগের উপকারী ঔষধি গাছ হচ্ছে পাথরকুচি। সুতরাং সবদিক থেকে বিবেচনা করলে পাথরকুচি পাতার জুড়ে মেলা ভার। যাই হোক, উপরে উল্লেখিত সম্পূর্ণ লেখাগুলো পড়ে আপনার যদি একটুও ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানিয়ে যাবেন।

জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন